

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৯ হাজার ৯০ বস্তা জব্দ করা সার সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না করে অতিরিক্ত দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। আদালত জব্দের সময় স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সারগুলো সরকারি দামে কৃষকদের নিকট বিক্রি করতে হবে।
কিন্তু কৃষকদের দাবি, স্থানীয় সার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে সেই নির্দেশ অমান্য করে বেচাকেনা করা হয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, জব্দ সার কখন এবং কীভাবে বিক্রি হলো এ বিষয়ে অধিকাংশেরই কোনো ধারণা নেই। বিক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা না থাকায় ইউএনও ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তদারকি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
জানা গেছে, গত ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর পাটগ্রামের বিভিন্ন সার বিক্রয় কেন্দ্র ও গুদামে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকারি সার অবৈধভাবে মজুদ ও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অভিযোগে ১৫টি দোকান থেকে মোট ৯০৯০ বস্তা সার জব্দ করা হয়। এ সময় ৮ জন ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জব্দ হওয়া সারের মধ্যে ছিল, ইউরিয়া ২৬০৭ বস্তা, টিএসপি ১৮১২ বস্তা, ডিএপি ১৩১৭ বস্তা, এমওপি ৩৩৫৪ বস্তা, জরিমানা পাওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন মিলন শেখ, ফারুক আহম্মেদ, মনিরুামান মনু, হায়দার আলী রাসেল, আব্দুল হামিদ, হাফিজুল ইসলাম ও রাইসুল ইসলাম।
জব্দের সময় ইউএনও উত্তম কুমার দাশ নির্দেশ দিয়েছিলেন জব্দ সার সংশ্লিষ্ট দোকান থেকেই সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে হবে। ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাতেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, সার পেতে প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, সার না কিনলে আবাদ নষ্ট হয়ে যেত, তাই বেশি দাম দিলেও সার নিতে বাধ্য হয়েছি। জব্দ সার কোন প্রক্রিয়ায়, কখন এবং কার কাছে দেওয়া হলো এ বিষয়ে কৃষকদের কাছে পরিষ্কার তথ্য নেই। ফলে ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অভিযোগ বাড়তে থাকায় গত ৩ ডিসেম্বর রাতারাতি ঘোষণা দিয়ে ২,৫০০ বস্তা, সার সরকারি দামে বিক্রি করা হয়। তবে কৃষকদের অনেকে বলছেন, এই বিক্রয়ও সঠিকভাবে হয়নি।
কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের মিজানুর ইসলাম বলেন, আমার নামে সার বিক্রি দেখানো হয়েছে, অথচ আমি ভ্যান চালাই সারই কিনিনি।
টেপুরগাড়ীর কৃষক বিপুল রায় জানান, বাকিতে নিলে টিএসপি ২৩৫০, ইউরিয়া ১৮০০, ডিএপি ১৬০০-১৭০০ টাকা ধরেছে।
সার ব্যবসায়ী ফিরোজ হাসান স্বীকার করে বলেন, বাকিতে দেওয়ায় কিছুটা বেশি দামে সার দেওয়া হয়েছে। তবে মেসার্স অন্তর ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল আজিজও দামের পার্থক্যের কথা স্বীকার করেন।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, জব্দ সার সরকারি দরে বিক্রির নির্দেশ ছিল। অভিযোগ পেয়েছি, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাটগ্রাম ইউএনও উত্তম কুমার দাশ কালবেলাকে বলেন, সব জায়গায় আমার উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। সরকারি দামে বিক্রি করতে বলা হয়েছিল। অনিয়ম প্রমাণ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন