প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছি; কিন্তু কোনোদিন ভয় পাইনি। কেন যেন মনে হতো আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে। এ বিশ্বাস নিয়ে আমার পথচলা। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস পেয়েছি, যা আমাকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ও সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বারবার তার ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে কিছু সময় দেন, কিছু মানুষকে কিছু কাজ দেন এবং এই কাজটা আমি যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ করব, রাব্বুল আলামিন আমাকে রক্ষা করবেন। এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারবালায় নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়নি; কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা, আমার ভাইয়ের স্ত্রীদের ছাড়েনি। চার বছরের শিশুকেও ছাড়েনি। সবাইকে হত্যা করা হয়। আমি ও আমার ছোট বোন দেশের বাইরে ছিলাম। স্বজনহারা আর্তনাদ আর ঘর-বাড়ি ছাড়া ছয়টি বছর আমাদের কাটাতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমি সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। পেয়েছিলাম বনানীতে সারি সারি কবর। আর পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষ। কাজেই সে মানুষগুলো আমার পরিবার, তারাই আমার আপনজন। তাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি আমার বাবার ভালোবাসা, মায়ের স্নেহ ও ভাইয়ের ভালোবাসা।
দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে আমাদের সন্তানরা বিপথে যেতে না পারে। যারা জঙ্গিবাদী, তারা সন্ত্রাসী। তারা কোনো ধর্ম, দেশ বা জাতি-গোষ্ঠীর নয়। তাই সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, আমাদের ধর্মের মান-ইজ্জত রক্ষা করবেন। কেউ যেন এই বিপথে না যায়। সন্তানের নিয়মিত স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয়টি এবং কার সঙ্গে মিশছে, সে বিষয়টি আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ দেশের মানুষ দুবেলা পেটভরে ভাত খেতে পারছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন এবং আজ বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছি। সে মর্যাদা নিয়েই মাথা উঁচু করে আমরা চলতে চাই। এ সময় তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তার সরকার, দল ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ এনে বদনাম দেওয়ার চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিজয়ী ৫ জন হাফেজের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, অর্থের চেক এবং সনদ তুলে দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ধর্ম সচিব মু আ হামিদ জমাদ্দার, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক উবায়দুর রহমান খান নদভী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন