রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নান্দনিক ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে। দীর্ঘ ৫৪ বছর পর শুরু হওয়া এ সংস্কার কাজ ঘিরে নানা প্রশ্ন ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পাঠাগার, বিশ্রামাগার ও বিশেষ অতিথিদের জন্য কমপ্লেক্স নির্মাণসহ স্মৃতিসৌধের পরিবেশ উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাখা হবে কি না, তা নিয়ে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর বক্তব্য এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এজাজ রহমান বলেন, ‘কাজ চলছে। আধুনিক ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ, মাল্টিপারপাস ভবন স্থাপন, পেভমেন্ট ও টাইলস পরিবর্তন করা হবে। তবে কোনো মুজিব-ঠুজিব থাকবে না।’ অন্যদিকে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান বলেন, ‘স্মৃতিসৌধের নকশায় কোনো পরিবর্তন হবে না। যা ছিল, তাই থাকবে।’
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘নকশার পরিবর্তন প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধুর নাম অবশ্যই থাকবে, কারণ মূল ফলক বঙ্গবন্ধুর উদ্বোধন করা। কেউ বিশেষ উদ্দেশ্যে কিছু করলে সেটা দুঃখজনক হবে।’ তিনি আরও জানান, বিশেষ অতিথিদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ ও বিশ্রামাগার রাখা হচ্ছে এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পাঠাগার গড়ে তোলা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মূল স্মৃতিসৌধের জরাজীর্ণ ইটের গাঁথুনি, সম্মুখ প্লাজার পেভমেন্ট এবং টাইলসও পরিবর্তন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে’—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যাপক সমালোচনা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার গণপূর্ত বিভাগ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ‘স্মৃতিসৌধের মূল নকশায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রকল্পের আওতায় কেবল সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। কাজ বাস্তবায়ন করছে কুশলী নির্মাতা লিমিটেড। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে নভেম্বর ২০২৪-এ এবং শেষ হবে জুন ২০২৫-এ।’ চুক্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক: এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, সরকার পরিবর্তনের পর স্মৃতিসৌধের নকশা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে কিছু অতিউৎসাহী কর্মকর্তা নিজেদের মতো করে কিছু পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন, যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এদিকে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে কুশলী নির্মাতা লিমিটেড এককভাবে কাজ পেয়েছে। নতুন সরকার আসার পরও তারা সিন্ডিকেট ধরে রেখেছে। অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার ও নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান ১০ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে এ ঠিকাদারি কাজ অনুমোদন দিয়েছেন। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কুশলী নির্মাতা লিমিটেডের কর্মকর্তা রফিকুল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘১০ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে কাজ নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আমরা কোনো কাজ করিনি। কাজ পাইনি ঘনিষ্ঠতার কারণে, সবকিছু নিয়ম মেনে হয়েছে।’
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া দেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মিরপুরে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সৌধের ফলক উন্মোচন করেন। স্মৃতিসৌধের নকশা করেছিলেন স্থপতি মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি।
মন্তব্য করুন