ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। দুই দেশের চলমান উত্তেজনায় এশিয়ার বাণিজ্যিক পরিবেশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দুই পরাশক্তির মধ্যকার এ সংঘাত এশিয়ার বাণিজ্য পরিবেশকে অস্থির করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত আকাশপথ ও স্থলসীমান্তে সম্ভাব্য বিঘ্ন আঞ্চলিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এ দুই দেশের চলমান সংঘাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঝুঁকিমুক্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদি এ দুই দেশের সংঘাত দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে, তবে বাংলাদেশের ওপরও কিছুটা প্রভাব পড়বে। আর এজন্য আগে থেকেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিকল্প বাজার বা ‘প্ল্যান বি’ ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৮ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। ভারত হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানি উৎস। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে চীন। সেখান থেকে বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ শতাংশ আসে। ভারত থেকে যত মূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, রপ্তানি করে তার ৭ ভাগের এক অংশ।
বাংলাদেশের আমদানি করা ভারতীয় পণ্যের তালিকায় শীর্ষে আছে তুলা। মোট আমদানি খরচের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হয় বস্ত্র খাতের এ কাঁচামাল আমদানিতে। খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলসহ ভোজ্যতেল, চিনি, মধু, কোমল পানীয়, চিপস, বিস্কুট, চকলেট ও ক্যান্ডি জাতীয় খাবার। এ ছাড়া রয়েছে রেলের বগি, ইঞ্জিনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ।
প্রথম দিকে বাংলাদেশ ভারত থেকে মূলত পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যই আমদানি করত। বর্তমান প্রবণতা হলো কাঁচামাল ও শিল্পায়নে প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রের মতো পণ্য আমদানি করা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য পরিবেশকে অস্থির করে তুলতে পারে। আকাশপথ ও স্থলসীমান্তে সম্ভাব্য বিঘ্ন আঞ্চলিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, যার স্বল্পমেয়াদি প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যের ওপরও পড়তে পারে। তবে বাংলাদেশের বহুমুখী ও স্থিতিশীল বাণিজ্য কাঠামো এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম। ভারতের সঙ্গে আমাদের বার্ষিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্প্রসারিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের জন্য বিকল্প উৎস হিসেবে কার্যকর হতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দুই দেশের যুদ্ধ নিয়ে, বিশেষ করে পুঁজিবাজার এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একটা চিন্তা কাজ করছে। ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে যেহেতু আমাদের বাণিজ্য আছে, সেহেতু এ সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে আমাদের ওপরও একটা প্রভাব পড়বে। তাই আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে বিশ্ব দরবারে আলাপ-আলোচনা করা হোক। দক্ষিণ এশিয়া একটি শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল, এখানে যদি অশান্তি হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য এ ক্ষতি পূরণ করা কঠিন হবে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, তাদের যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হয় না। আমরা অতীতেও এমন দেখেছি। এখন যুদ্ধের কারণে যদি তাদের উৎপাদন বিঘ্নিত না হয়, তাহলে যুদ্ধের সরাসরি কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার কথা না। যুদ্ধের কারণে বাণিজ্য যদি বাধাগ্রস্ত হয়, আর ভারতে উৎপাদন কমে যায়, তাহলে তারা যদি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, কারখানাগুলো যদি না চলে, তাহলে তারা অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে প্রাধান্য দেবে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের আশঙ্কা এতটা বড় না, তবে তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মন্তব্য করুন