বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। প্রস্তাবিত কাঠামোতে পদগুলোর প্রয়োজনীয়তা, প্রাসঙ্গিকতা, কর্মপরিধি নির্ধারণ ও আর্থিক বিষয়াদির পর্যালোচনাসহ পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হলে তখন যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয় থেকে জেনেছি।’
জানা গেছে, ২০১৭ সালে বিইআরসির বিদ্যমান ৮১ পদের সঙ্গে আরও ২০০ পদ সৃজন করে (২৮১ পদ) খসড়া জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য প্রেরণ করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিইআরসির প্রস্তাবিত জনবলের সংখ্যা কমিয়ে ১১৮তে নামিয়ে আনে। দুই বছর পর ২০১৯ সালে দুই ধাপে নিয়োগের শর্তে অনুমোদন দেয় অর্থ বিভাগ। পরে ২০২১ সালের মার্চে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে রাজস্ব খাতে ৬৫টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে আগের ৮১ ও প্রস্তাবিত ৬৫ পদ মিলে ১৪৬ জনবলের কথা বলা হয়।
এ প্রেক্ষাপটে বিইআরসি ১৪৬ পদের দায়িত্ব বণ্টননীতি প্রস্তুত করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেড-৩ ও তদূর্ধ্ব পদ সৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন আবশ্যক। এ রকম চারটি পদ থাকায় ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন না দিয়ে যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা করতে বলেন। তারপর এটি আর এগোয়নি। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ জুলাই ফের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জনবল কাঠামোর প্রস্তাবনা পাঠায় বিইআরসি। এর আট মাসের বেশি সময় পরে প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
বিইআরসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জনবল কাঠামো ঝুলে থাকায় সংস্থাটির কর্মকর্তা-বর্মচারদের মধ্যে স্থবিরতা ও অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। পদ না থাকায় একই পদে বছরের পর বছর পড়ে থাকায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। আইন অনুযায়ী সহকারী পরিচালক পদে ১০ বছর কাজ করার পর উপপরিচালক পদে প্রমোশন হওয়ার কথা। কিন্তু ১৩ বছর চাকরি হয়ে গেছে; কিন্তু প্রমোশন পাচ্ছেন না। আবার উপপরিচালক পদে ৩ বছরসহ প্রথম শ্রেণির পদে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে পরিচালক হওয়ার কথা। একজন কর্মকর্তা প্রথম শ্রেণির পদসহ উপপরিচালক পদে ২৬ বছর ধরে সার্ভিস দিয়ে আসছেন। যিনি আর মাত্র ২ মাস পর অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু প্রমোশন নামক সোনার হরিণ তার ভাগ্যে জোটেনি। এমন আরও অনেকেই আছেন।
এ ছাড়া অনেক পদে প্রেষণে নিয়োগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দেখা যাচ্ছে পরিচালক (গ্যাস) দেওয়া হচ্ছে পেট্রোবাংলা অথবা গ্যাস কোম্পানিগুলো থেকে। একইভাবে পরিচালক (বিদ্যুৎ) নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুতের কোম্পানি থেকে। যারা এখানে বসে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদন মূল্যায়ন করছেন। এখানে স্বার্থের সংঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাব। এমনও দেখা গেছে, যিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা, তিনি প্রেষণে বিইআরসিতে বসে পশ্চিমাঞ্চল কোম্পানির গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মূল্যায়ন করছেন। এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে, যেগুলো ওই পদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবুও তাদের অফিসাররাই ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
প্রসঙ্গত, আগের সরকার যে প্রবিধানমালার দোহাই দিয়ে জ্বালানি তেলের দাম নির্বাহী আদেশে নির্ধারণ করত। সেগুলো এখনো ঝুলে রাখার পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৫ দিনের কাজ ৯ মাসেও শেষ করা যায়নি। ২০১২ সাল থেকে ঝুলিয়ে রাখা প্রবিধানমালা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দিকে আলোচনা হলেও এখন থেমে গেছে। আগের সরকারের আমলাদের মতোই বর্তমান আমলারাও বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার পথেই হাঁটছে।
মন্তব্য করুন