কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ০৮:১৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় শুল্ক বাড়ছে প্রসাধনী পণ্য আমদানিতে

বাজেট ২০২৫-২৬
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ত্বকের যত্নের পাশাপাশি প্রতিদিনের চলাফেরায় সাজসজ্জা নারীদের একটি নৈমিত্তিক বিষয়। এজন্য স্কিন কেয়ার ও প্রসাধনী সামগ্রীতে নিয়মিত খরচ করেন তারা। তবে স্কিন কেয়ার ও প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিতে পারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। কারণ এই বাজেটে এসব পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে স্কিন কেয়ার এবং প্রসাধনী পণ্যের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। তবে একটি বড় কোম্পানি সম্প্রতি দেশেও এসব পণ্য তৈরি করা শুরু করেছে। স্থানীয় কোম্পানিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমদানিনির্ভর সব পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, আমদানি হওয়া পণ্যগুলোর যে শুল্কায়ণ মূল্য ছিল, তা আসন্ন বাজেটে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে লিপস্টিক, লিপ লাইনার, লিপগ্লস, লিপজেল, আইশ্যাডো, আইলাইনার, আইব্রো পেন্সিল, মাশকারা, মেনিকিউর-পেডিকিউরে ব্যবহৃত জেল, পাউডার, যে কোনো ধরনের ফেস বা স্কিনের ক্রিম, ময়েশ্চার লোশন, মেকআপ কিট, ফাউন্ডেশন, ফেসওয়াশ, মেহেদিসহ নানা পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্যের ক্যাটাগরি ভেদে আমদানির সময় সর্বনিম্ন শুল্কায়ণ মূল্য রয়েছে ৫-২০ ডলার পর্যন্ত। এর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যের আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি করা হতে পারে। এই শুল্কায়ন মূল্য কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। আসন্ন বাজেটে শুধু মেহেদি বাদে উল্লিখিত সব পণ্যের সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য ৪০ ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য সবচেয়ে বেশি বাড়তে পারে লিপস্টিক আমদানিতে।

জানা গেছে, দেশের বাজারে দুই ধরনের কসমেটিক্স পণ্য ব্যবহার হয়। কালার কসমেটিক্স এবং স্কিন কেয়ার হিসেবে ভাগ করা হয় পণ্যগুলোকে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে কালার কসমেটিক্স পণ্যের বাজার ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকার, যা ২০২০ সালে ছিল সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার। স্কিন কেয়ার পণ্যের মোট বাজার ২১ হাজার কোটি টাকার, যা ২০২২ সালে ছিল ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। স্ক্রিন কেয়ার এবং কালার কসমেটিক্সভুক্ত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ওষ্ঠাধার প্রসাধনী, চোখের সাজে ব্যবহৃত প্রসাধনী, হাত, নখ, ও পায়ের প্রসাধনী, পাউডার, সুগন্ধি বাথ সল্ট, মেকআপ কিট, ফাউন্ডেশনসহ আরও অনেক কিছু।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এসব কসমেটিক্স পণ্যের পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। তবে ২০২২ সালে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম বড় বিনিয়োগ করেন এ খাতে। ৪০টি ব্র্যান্ডের কালার কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার, হোম কেয়ার ও পারসোনাল কেয়ারের প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রিমার্ক এলএলসির এশিয়ায় অধিভুক্ত অংশীদার হিসেবে রিমার্ক এইচবি নামে কোম্পানিও গঠন করা হয়। এই কোম্পানির আন্ডারে এখন কসমেটিক্স পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এর বাইরেও ছোট আকারে কিছু প্রতিষ্ঠান এসব কসমেটিক্স পণ্য উৎপাদন করছে। বাংলাদেশে কালার কসমেটিক্স উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। এর বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০-এর মতো প্রতিষ্ঠান স্কিন কেয়ার পণ্য তৈরি করে। এর মধ্যে একটি পণ্য সবাই তৈরি করে, যেমন ফেসওয়াশ। ইউনিলিভার, স্কয়ার, এসিআইসহ সব প্রতিষ্ঠানই এগুলো তৈরি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কসমেটিক্স পণ্যের উৎপাদন শুরু হলেও সেটা এখনো চাহিদা পূরণের ধারে-কাছেও নেই। তবুও এবারে স্থানীয় কোম্পানিকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমদানির খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে আসন্ন বাজেটে।

ট্যারিফ কমিশন বলছে, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ২০-৩৯ বছর পর্যন্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৭৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮। এই জনসংখ্যার ৭০ ভাগকে কসমেটিক্স পণ্যের মূল্য ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে এর বাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কমসেটিক্স আমদানিতে নানা জটিলতা রয়েছে। লাগেজ পার্টির মাধ্যমে দেশে অনেক কসমেটিক্স আসে, যেগুলো থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না। ঢাকার গুলশান, বনানী, বেইলি রোড, ধানমন্ডির মতো জায়গায় এসব পণ্য অনেক দাম দিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়—যেখানে সবই বিক্রি হয় বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স। এর বাইরে বৈধভাবে কসমেটিক্স আমদানি হলেও সেখানে ব্যাপক শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স কম মূল্য দেখিয়ে আমদানির।

আমদানি ও স্কিন কেয়ার পণ্যের উৎপাদনে জড়িত স্থানীয় উদ্যেক্তারা বলছেন, বাজেটে আমদানিতে কড়াকড়ি করলে তা স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা বাড়াবে। এর বাইরে যদি কাঁচামাল আমদানিতে সরকার ছাড় দেয়, তাহলে আগামী ৫ বছরে স্থানীয় উৎপাদনও একটা বড় পর্যায়ে চলে যাবে এবং তখন আমদানির বিকল্প হিসেবে দেশি ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য নিয়মিত ব্যবহারের কারণে ক্রেতার মধ্যে গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান উদ্যোক্তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যমূলক : বিএসপি চেয়ারম্যান 

সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

প্রথম আইপিএল ট্রফি জিততে পাঞ্জাবের দরকার ১৯১ রান

আমেরিকার এক প্রতিবেদনে কুপোকাত আদানি

মোস্তফা জামাল হায়দারের সুস্থতায় দোয়া চাইলেন রাশেদ প্রধান

পুশ-ইন নিয়ে আবার চিঠি দেব দিল্লিকে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কুমিল্লায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণ

লাখো ভক্তের সমাগমে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবস পালিত

ভুটানের বিপক্ষে কি দেখা যাবে হামজা-ফাহামিদুলকে?

বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. কুদরত-ই-জাহান

১০

কোটিপতি কমেছে ৭১৯ জন

১১

মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ৫ লাখ টাকা চাইলেন এসআই

১২

নৌবাহিনীর উদ্যোগে পটুয়াখালীতে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান

১৩

ঈদযাত্রার মধ্যে কেমন থাকবে আবহাওয়া

১৪

মেট্রোরেলে বড় নিয়োগ, আবেদন ৪ জুনের মধ্যেই

১৫

দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে মারলেন চাচা

১৬

বাজেট নিয়ে নাহিদের প্রতিক্রিয়া

১৭

ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার দাবিতে প্রচার, যা জানা গেল

১৮

সাংবাদিকদের বসার কষ্ট দেখে দুঃখ প্রকাশ জামাল ভূঁইয়ার

১৯

ধানমন্ডিতে রিকশাচালকদের রেইনকোট বিতরণ

২০
X