‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। স্ত্রীর মৃত্যুর এক দিন পরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই চলচ্চিত্র পরিচালক। উত্তরার নিজ বাসায় তিনি ঘুমের মধ্যে মারা যান। এর এক দিন আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রী প্রিয়া রহমান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা গেছেন।
টাঙ্গাইলে স্ত্রীর দাফন শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে উত্তরার বাসভবনে ফিরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। অনেক ডাকাডাকি করেও তার সাড়া পাননি গৃহকর্মী। পরে অচেতন অবস্থায় সন্ধ্যায় উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। হাসপাতালে নেওয়ার আগে ঘুমের মধ্যেই সোহানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা তানভীর ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
স্ত্রীর মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোহান চলে গেলেন। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন তিনি। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি চিকিৎসকরা। তিনি দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
সোহানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তথ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় বলেন, ‘সোহানুর রহমান সোহানের চলে যাওয়া দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক বেদনাবিধুর অধ্যায়। করোনার ক্রান্তিকাল পেরিয়ে সিনেমা জগতের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর এই সময় তার মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি সোহানের মৃত্যুর খবরে ঢাকাই সিনেমার পরিচালক, শিল্পীরা হাসপাতালে ভিড় করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, মহাসচিব শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলম প্রমুখ তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
সোহানের মরদেহ উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। স্ত্রীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করার ইচ্ছাপোষণ করে গেছেন সোহান। তবে দাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
১৯৭৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান ক্যারিয়ার শুরু করেন নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ সিনেমা দিয়ে প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে ১৯৯৩ সালে তিনি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে সাফল্য পান। এই সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক হয় প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ, নায়িকা মৌসুমীর। তারা ও কণ্ঠশিল্পী আগুন তারকাখ্যাতি পান কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমা দিয়ে।
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত অন্যতম সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ ইত্যাদি।
১৯৬০ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ার ফুলবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করে সোহান। বগুড়া ও জয়পুরহাটে স্কুল ও কলেজজীবন শেষে ঢাকায় আসেন তিনি। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কলেজে।
মন্তব্য করুন