

আধুনিক জীবনে শারীরিক বিকৃত ভঙ্গির কারণে দেখা দিচ্ছে মেরুদণ্ডের সমস্যা। এর মধ্যে অঙ্গভঙ্গিজনিত কোমর ব্যথা অন্যতম। কর্মস্থলে সঠিকভাবে বসে কাজ না করায় এটি হয়ে থাকে। চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটির জন্যও এ সমস্যা দেখা দেয়। সব বয়সেই দেহভঙ্গিজনিত কোমর ব্যথা হতে পারে। অত্যধিক মানসিক চাপে, এমনকি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।
সমস্যার কারণ: কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ দেহভঙ্গিজনিত কোমর ব্যথা। সাধারণত কোমরের পেছনের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। তবে, নিম্নলিখিত কারণগুলো অবশ্য বিবেচ্য—১. দৈহিক অস্বাভাবিকতার (বিকৃতি) জন্য মেরুদণ্ডের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ করে টান অথবা চাপ পড়লে। ২. সঠিকভাবে না বসার কারণে মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর বক্রতার পরিবর্তন। ৩. কোমরের ভারসাম্যহীনতার জন্য ডিস্কজনিত সমস্যা, ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ, ডিস্কের স্থানচ্যুতি।
উপসর্গ: কোমর, নিতম্ব ব্যথা, কোমর থেকে পায়ে ঝিঝি করা, কিছু ক্ষেত্রে অনুভূতি কমে যাওয়া ও দুর্বলতা দেখা দেওয়া।
ঝুঁকিতে কারা: অফিস কিংবা বাড়িতে যারা সারাক্ষণ বসে কাজ করেন, চল্লিশোর্ধ্ব প্রায় সবাই ঝুঁকিতে, পুরুষের তুলনায় নারীদের এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
সমাধানের উপায়: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোমর ব্যথা সহজেই সমাধান করা যায়। তবে কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে সহজে সুস্থ হওয়া কষ্ঠসাধ্য হয়ে ওঠে। সারাক্ষণ ব্যথা তাড়া করে। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ সেবন গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সঠিক দেহবিন্যাস জেনে সে অনুসারে কর্মস্থলে কাজ করা এবং প্রয়োজনে দেহভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত শারীরচর্চায় অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রতিরোধের উপায়: সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে। বিকৃত দেহভঙ্গিতে কাজ করা বা বিশ্রাম পরিহার করতে হবে। শক্ত, সমান বিছানা, পাতলা তোশক, এক বালিশে শোতে হবে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা পরিহার করতে হবে, মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাচলা করতে হবে। চেয়ারে কোমর সোজা রেখে বসা, কোমরের পেছনে সাপোর্ট হিসেবে তোয়ালে, ছোট বালিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কম হিলের আরামদায়ক জুতা পরা, ভারী কাজে সতর্কতা অবলম্বন করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হালকা শারীরিক ব্যায়াম, প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকা, নিয়মিতভাবে ক্যালসিয়াম-ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন খনিজ লবণযুক্ত খাবার এ সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
ডা. প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ
চেম্বার: আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
মন্তব্য করুন