ডুবতে বসেছে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দুই দফায় বিস্ফোরণের শিকার তেলবাহী ট্যাঙ্কার সাগর নন্দিনী-২। দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের পর এতে থাকা ৩ লাখ ৮০ হাজার লিটার পরিত্যক্ত তেল অপসারণে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন জ্বালানি সচিব। কিন্তু এর পরও শুরু হয়নি তেল অপসারণের কাজ। অন্যদিকে ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে চারজন নিহতের ঘটনার ছয় দিনেও কোনো মামলা হয়নি।
জানা যায়, পরপর দুই দফা বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ট্যাঙ্কারটির পুরো বডিতে ছোট ছোট ছিদ্র হয়েছে। তলা ফেটে উঠছে পানি। এ অবস্থায় গত বুধবার বিকেল থেকে দুটি বাল্কহেড বসিয়ে পাম্পের সাহায্যে সেখান থেকে পানি সরানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, তেল পুরোপুরি অপসারণের আগেই ট্যাঙ্কারটি ডুবে গেলে মানুষ ও পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হবে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফিরোজ কুতুবী বলেন, ট্যাঙ্কারে থাকা অবশিষ্ট তেল অপসারণে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নির্দেশনা ছাড়া তা এখনই অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পানি উঠে ট্যাঙ্কারটি যেন ডুবে না যায়, সে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গত ১ জুলাই প্রথম বিস্ফোরণের পরই জাহাজটি থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ছোট ছোট কার্গো ট্যাঙ্কারে করে তেল সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আসিফ মালিক। তবে দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণের পর সেই কাজ থমকে যায়।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদিকদের বলেন, জাহাজটিতে মোট ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৫৪ লিটার ডিজেল ছিল। পেট্রোল ছিল ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৬২ লিটার। দুর্ঘটনার পর ডিপোতে খালাস করা হয় ৪ লাখ ২৩ হাজার ২২৮ লিটার ডিজেল। আরও ২ লাখ লিটার ডিজেল পদ্মা ওয়েল কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৪ ট্যাঙ্কারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি পেট্রোল ওই ট্যাঙ্কারেই রয়ে গেছে। তদন্ত কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে দু-এক দিনের মধ্যে তা অপসারণ করা হবে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে পদ্মা ওয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপককে (অপারেশন) প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিস্ফোরণের পরই ওই কমিটির কাজ শুরু করেছে।
এদিকে দুই দফায় বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও চারজনের নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না হওয়ার বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, আমার কোনো অভিযোগ পাইনি।
গত ১ জুলাই সুগন্ধা নদীতে নোঙর করা অবস্থায় জ্বালানি তেল নিয়ে ট্যাঙ্কার সাগর নন্দিনী-২-এ বিস্ফোরণ হলে চারজন মারা যান। মাত্র দুদিন পর ৩ জুলাই একই ট্যাঙ্কারে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায় ফায়াস সার্ভিস। এতে দগ্ধ হয়ে আহত হন পুলিশসহ ১৪ জন।
মন্তব্য করুন