রাজধানীর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তফা হোসেন হেলালের চলাফেরা দেখলে যে কারও আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাবে। একসময় মধ্য বাড্ডা এলাকার পোস্ট অফিস গলিতে সিডি ও ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালাতেন। ছাত্রলীগের পদ পেয়েই রাতারাতি যেন পেয়ে যান আলাউদ্দিনের চেরাগ। চলাফেরা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের প্রিন্সের মতো।
হেলালের নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে অন্তত ২৫টি স্পা সেন্টার রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব স্পা সেন্টারের আড়ালে তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। ছা্ত্রলীগের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে বিয়ে করেছেন স্পা সেন্টারের এক মালিককে। তা ছাড়াও রয়েছে একাধিক স্ত্রী। চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। থাকেন নিজের কেনা অভিজাত ফ্ল্যাটে। প্রায়ই ঘুরতে যান বিদেশে। কালবেলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
মোস্তফা হোসেন হেলালের বিরুদ্ধে ৪২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অথচ তার দৃশ্যমান কোনো আয় নেই। গুলশানের কয়েকটি স্পা সেন্টারের মালিক কালবেলাকে জানিয়েছেন, স্পা সেন্টার চালাতে হলে হেলালকে প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবাই ভয়ে চাঁদা দেন তাকে।
জানা গেছে, সরকারি তিতুমীর কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১০-১১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন হেলাল। তিনি কীভাবে এখনো ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তা রহস্যে ঘেরা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বয়স ২৯ পেরোলে সংগঠনের পদে থাকা যায় না। কালবেলার হাতে আসা হেলালের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৮৯ সালের ২ মার্চ। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই দায়িত্ব পাওয়ার সময়ই তার বয়স ছিল ৩০ বছর। বর্তমানে বয়স ৩৪ বছর সাত মাস। গুলশান থানা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হেলালের একক আধিপত্য। চার বছর ধরে গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ ধরে রেখেছেন তিনি। তার নামে চাঁদাবাজি ছাড়াও রয়েছে নানা অভিযোগ। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী।
হেলালের বিরুদ্ধে নিজের মনমতো সংগঠন পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ এনে কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দেন তিনি। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, কোনো নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার থানা কমিটির নেই।
গুলশান থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, দলীয় পদ পেয়েই বেপরোয়া হেলাল। গড়ে তুলেছেন অসামাজিক কার্যকলাপের সাম্রাজ্য। দলের নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও হেলালের চাঁদাবাজি, অন্যদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অন্যায় কাজে সহযোগিতা না করলে তাদের দেওয়া হয় অব্যাহতি। এসব বিষয় জানতে মোবাইল ফোনে মোস্তফা হোসেন হেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্টো হুমকি দেন এ প্রতিবেদককে। কালবেলাকে হেলাল বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে নিউজ করায় অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছি।’
হেলালের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদে থেকে কারও অনৈতিক কাজে জড়ানোর সুযোগ নেই। সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’