শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট নিরসনে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বছর বছর শিক্ষার্থী বেড়েছে, এতে দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা বেড়েছে বহুগুণে। আট বছরেও হয়নি চবির সেই হলের নির্মাণকাজ। প্রকৌশল দপ্তরের তথ্যমতে, প্রথমে ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮৬ আসনবিশিষ্ট ৪৫ হাজার বর্গফুটের দ্বিতল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করা হয়। দুটি লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগার, ৫০ কেভি পাওয়ার জেনারেটর, ক্যান্টিন, প্রার্থনাকক্ষ, ইনডোর খেলা, কমন রুম, ইউনিয়ন রুম, টিভি রুম, ওয়েটিং রুম, প্রভোস্ট রুম, শিক্ষকদের রুম, লন্ড্রি, দোকানসহ সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে হলটিতে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ না দিয়েই ২০১৭ সালের জুলাই থেকে হলটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর দোতলা হলকে ৭৩৮ আসনবিশিষ্ট ছয়তলায় রূপান্তর করা মোট আয়তন দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৪৮ বর্গ মিটার। যার নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪২ কোটি ৯০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের শেষের দিকে হলটি চালু করে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তৎকালীন উপাচার্য ড. ইফতেখার। কিন্তু তখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ঢালি কনস্ট্রাকশন’ হলটির কাজ পুরোপুরি শেষ করতে না পারায় তা সম্ভব হয়নি। বাকি কাজ শেষ করতে এ পর্যন্ত মোট ছয়বার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু তার পরও সব কাজ শেষ করতে পারেনি ওই প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল কালবেলাকে বলেন, ২০১৭ সালে ‘ঢালি কনস্ট্রাকশন’ দ্বিতীয় দফার কাজ নিলেও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে তাদের কাজ বাতিল করা হয়েছে। আনুমানিক ২০ শতাংশের মতো কাজ এখনো বাকি। কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নতুন করে আবারও তা শুরু হবে। কবে নাগাদ শেষ হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ তিন মাসের কাজ বাকি। তবে, পেশাদার ঠিকাদার কাজ নিলে দ্রুতই শেষ হবে বলে আশা করছি। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, সৎ, দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে বর্তমান প্রশাসন কাজটি এখনো শেষ করতে পারেনি। অথচ দায়িত্বের শেষ বছরে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজই শেষ করেছিলাম। এদিকে হলটি চালু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আবাসন সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীরা। কালবেলাকে তারা বলেন, বর্তমানে কিছু শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছি। হলে থেকেও অসহায়ের মতো জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এগুলো বেশ পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আতঙ্কের সঙ্গে থাকছি। তা ছাড়া পর্যাপ্ত সিট, পড়ার পরিবেশ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, ভালোমানের খাবার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ—কোনোটাই নেই। তাই, আধুনিক হলটি দ্রুত চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন কালবেলাকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বিদ্যমান হলগুলোতেও সিট বরাদ্দ না থাকায় মেধাবীদেরও জায়গা হচ্ছে না। আবার নতুন হল নির্মাণকাজ দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। এ দীর্ঘসূত্রতার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, অতিরিক্ত টাকা খরচ করে খুব কষ্ট করে বাইরে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার কালবেলাকে বলেন, প্রশাসন বিষয়গুলো বিবেচনা করছে। তা ছাড়া হলের কাজের পাশাপাশি প্রভোস্ট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিয়োগ হয়নি। সবকিছু শেষ করে শিগগিরই হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য সাতটি এবং ছাত্রীদের জন্য পাঁচটি হল চালু রয়েছে। এতে সিট সংখ্যা ৫ হাজার ৩০৭টি। যেখানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বর্তমানে আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে।
মন্তব্য করুন