পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে কক্সবাজারের টেকনাফের দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত পশ্চিম মুণ্ডার ডেইল এলাকায় সড়কের ভাঙন প্রায় ২৫০ মিটার বড় হয়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিনে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের তিনটি এলাকায় দুই কিলোমিটারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে আটটি ফাটল বড় আকার ধারণ করে। ভেঙে যাওয়া প্রায় ১ হাজার মিটার সড়কে দেওয়া হচ্ছে জিওব্যাগের বালুর বাঁধ। এ ছাড়া সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে পেকুয়ার কাটাফাঁড়ি ব্রিজ-করিমদাদ মিয়া চৌধুরী জেটিঘাট সড়ক। অন্যদিকে খুলনার পাইকগাছায় কড়ুলিয়া নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই পাইকগাছা-কয়রার পুরোনো পিচের রাস্তাসহ কয়েকশ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙন রোধে কর্মতৎপরতার বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সেলিম বলেন, নতুন করে আর কোনো ভাঙন হয়নি। দ্রুত জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙা এলাকা মেরামত শুরু হওয়ায়
কিছুটা হলেও মানুষ রক্ষা পেয়েছে। তবে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি জনবসতি রক্ষার জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ জরুরি, তা না হলে যে কোনো সময় জোয়ারের আঘাতে সড়কটি বিলীন হয়ে যেতে পারে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢেউয়ের আঘাতে সড়কে নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি না হলেও আগের ভাঙাগুলো বড় আকার ধারণ করে। সড়কের মুণ্ডার ডেইল অংশে দুই স্তরের জিও ব্যাগের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেখানে এখন বড় বড় ঢেউ এসে জিও ব্যাগের ওপর আছড়ে পড়ছে। জোয়ার থাকার কারণে সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে। জোয়ারের আঘাতে বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে গেছে। এসব ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন উপকূলীয় বন বিভাগের লোকজন।
দুপুরে সড়কটি পরিদর্শন করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস। এ সময় ইউএনও কামরুজ্জামান বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। এতে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা কাজ করছেন।
কক্সবাজার জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আরেফীন কালবেলাকে বলেন, সড়কটি সওজের হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইসিবির একটি ইউনিটের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বড় ভাঙনের এলাকায় বালুর বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। পরবর্তী সময়ে আড়াই কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পেকুয়ার কয়েকটি গ্রাম সাগরে বিলীনের আশঙ্কা:
পূর্ণিমার জোয়ারে পানি বেড়েছে সাগরে। এতে পেকুয়ার কাটাফাঁড়ি ব্রিজ-করিমদাদ মিয়া চৌধুরী জেটিঘাট সড়কের ধারিয়াখালী অংশে প্রায় পঞ্চাশ মিটার স্থান চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। রাস্তার অংশ বিশেষ ভেঙে সাগরের পানি উঠছে। এতে তলিয়ে যেতে পারে ধারিয়াখালীসহ কয়েকটি গ্রাম।
মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, সড়কটি দুটি ইউনিয়নের যোগাযোগ মাধ্যম। দ্রুত সংস্কার করা না হলে যে কোনো সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম বলেন, পুরো উজানটিয়া ও মগনামার দক্ষিণ অংশের লোকজন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। বহুবার আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও সমন্বয় সভায় এ সড়কের কথা বলছি। দুবার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সংস্কার করেছি।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, কয়েক মাস আগে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ফের দেবে গেছে। তবে নিজের অর্থায়নে আবার সংস্কার করার ব্যবস্থা করব।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইউএনও কথা বলেছেন। তিনটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। আপাতত পানি আটকানোর জন্য সড়কের দুপাশে প্রতিরোধকের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাইকগাছার আলমতলায় ভয়াবহ নদী ভাঙন:
খুলনার পাইকগাছায় কড়ুলিয়া নদীর পশ্চিম পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাইকগাছা-কয়রার পুরাতন পিচের রাস্তাসহ কয়েকশ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, ১৯৯৪ সাল থেকে উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের ১০/১২ পোল্ডারের চক বগুড়া ও আলমতলা মৌজায় ভাঙন শুরু হয়। কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভাঙন লেগেই আছে।
লস্কর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনের ফলে অপর প্রান্তে কড়ুলিয়া মৌজায় কয়েকশ বিঘা জমির চর জেগেছে। বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেরামত করেছি। বর্তমানে ব্যাপকভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ভেসে যেতে পারে হাজার হাজার বিঘা জমির মৎস্য ঘের।
পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু আহম্মেদ বলেন, আলমতলা ভাঙন এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
পাইকগাছার নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন