জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার ও বিজিবি কোস্টগার্ডের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ’ সংযোজন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিবের কাছে এসব প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। এতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় নতুন সংযোজনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সরকারের কাছে সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবের নির্ধারিত ছকে এসব প্রস্তাব পাঠানো হয়।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সঙ্গে ভিন্নমত ছিল নির্বাচন কমিশনের। গত ১৮ মার্চ দ্বিমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়। পরে সরকারের তরফ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি দেয় সরকার। সেখানে সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালের আগে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত কোনো বিধান আরপিওতে ছিল না। তারপরও ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও জেলা/থানা/উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়। ২০০১ সালের এক অধ্যাদেশে নির্বাচনে ‘ল’ এনফোর্সিং এজেন্সির’ সংজ্ঞায় ‘ডিফেন্স সার্ভিস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে তা বাদ দেওয়া হয়।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, সংজ্ঞায় ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ’ যুক্ত করা হলে ভোটে সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে মোতায়েনের পথ প্রশস্ত হবে। ফলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে কারও সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এতে ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে।
সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে ইসি, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের নয়টি বিষয় রয়েছে, যেসব বিষয়ে নির্বাচনের কমিশনের কাছে মতামত চায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এগুলো হলো—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সংশোধন), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (সংশোধন), নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক) পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ (অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী), পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা।
গতকাল সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে ইসির মতামতও তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আরপিও সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে। এর মাধ্যমে আরপিওর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার, বিজিবি কোস্টগার্ডের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ’ সংযোজন হবে। সরকারের সায় পেলে এর মাধ্যমে ১৫ বছর পর আরপিওতে এ সংস্কার আসবে।
ইসি সচিব বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে সব বলা সম্ভব নয়। ব্যালট পেপারে জলছাপের কথা (সুপারিশ)। এর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। তাই এটা আমরা আশু বাস্তবায়নযোগ্য মনে করি না।’
মন্তব্য করুন