হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ১১:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পর্যটকরা ৪ কারণে ঝুঁকিতে পড়ছেন

পর্যটনে নানা ঝুঁকি, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ
পর্যটকরা ৪ কারণে ঝুঁকিতে পড়ছেন
ফাইল ছবি

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রের সবকটি পাহাড়ি এলাকা। এ ছাড়া বিশ্বের একমাত্র দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর কক্সবাজার ও পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় পর্যটকদের মৃত্যু হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যত মৃত্যু রোধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চার কারণে পর্যটকদের মৃত্যু হচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে, অপ্রস্তুত ও অনভিজ্ঞতা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং পর্যটকদের অতিউৎসাহ ও অসাবধানতা। এ ছাড়া দুর্গম মনোমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ঘুরে দেখানোর জন্য দেশে প্রশিক্ষিত গাইডের অভাবও এ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এদিকে বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের মৃত্যুরোধে এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, প্রথমত এসব মৃত্যু রোধে পর্যটকদের আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি অপারেটরদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি জানান, এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাব দিয়েছি। বিশেষ করে কক্সবাজারের জন্য। কক্সবাজারের সব তারকামানের হোটেলে লাইফ গার্ডের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া লম্বা ছুটির সময় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি নিয়ে এখন কাজ চলছে। পাহাডের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, পাহাড়ে দুর্গম কেন্দ্রগুলোয় যারা ঘুরতে যান, তাদের অবশ্যই ওই এলাকা সম্পর্কে আগে খোঁজখবর নিয়ে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি যারা অপারেটরের দায়িত্ব পালন করেন তাদেরও সাবধান হতে হবে। দেশে অভিজ্ঞ গাইড কম কেন—জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি কম। তবু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

দেশের পর্যটন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সদ্য সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী পর্যটক নিজেরাই। অসচেতনতার পাশাপাশি অনেকেই কোনো নিয়মকানুন মানতে চান না। পাশাপাশি যারা দুর্গম এলাকাসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুর অপারেট করেন, তাদেরও আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।

ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ ছয়জন মারা গেছেন। বান্দরবানের আলীকদমে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণে গিয়ে মারা গেছেন দুজন এবং মিরসরাইয়ের পর্যটন কেন্দ্রে গত ৬ বছরে ১৬ পর্যটক মারা গেছেন। আর সীতাকুণ্ডে মারা গেছেন একজন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে পর্যটকদের অসচেতনতা। বিশেষ করে কক্সবাজার ও পাহাড়ি এলাকায় যেসব পর্যটক যান, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে অপারেটরদের জন্য। একজন অপারেটর নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, গত ২৯ মে নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে কূলে আঘাত হানছে। কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর আগেই আমি একটি পর্যটকের দল নিয়ে কক্সবাজার আসি। আমার দলের সদস্যদের সমুদ্রে নামতে মানা করলেও তারা শুনেননি। দলের একজন স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলেন। পরে স্থানীয় উদ্ধারকারী দলের সহায়তায় ওই পর্যটককে উদ্ধার করা হয়। তিনি আমাদের কথা না শুনে সাগরে নেমে পড়েন। এতে করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা অপারেটরের ওপরই পড়ত।

মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে ট্যুর অপারেট করে এমন বেশ কয়েকটি অপারেটরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ঝর্ণা ও ট্রেকিং এলাকা রয়েছে, যা বনবিভাগ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি লিজ নেয়; কিন্তু ওইসব স্পট যারা লিজ নেয়, তারা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগও রয়েছে। পাশাপাশি এসব এলাকায় প্রশিক্ষিত কোনো গাইডও নেই। যে কারণে পর্যটকরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো সবকিছু করতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।

পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিত ভ্রমণ করেন পর্যটক জিকলুল আহসান। তিনি জানান, দেশের পাহাড়ি এলাকা বলতে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড অন্যতম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যান বান্দরবানে। এ ছাড়া মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডতে পর্যটক দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, এসব এলাকায় ভ্রমণে অনেক সময় ট্যুর অপারেটররাও সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারেন না। এ ছাড়া দুর্গম ঝর্ণা বা ট্রেকিং রুটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল। বিপদাপন্ন স্থানে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড, গাইডলাইন বা জরুরি সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রায়ই অনুপস্থিত। এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ট্যুর অপারেটর ও স্থানীয় গাইডরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো সক্ষমতা রাখেন না। আবার অনেক পর্যটক অতিউৎসাহের বশে বা অসাবধানতাবশত বিপজ্জনক কাজ করেন, যেমন—স্রোতের কাছাকাছি যাওয়া, গভীর পানিতে নামা বা পিচ্ছিল পাথরে হাঁটা। এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় দুর্ঘটনা কমাতে পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করা, ঝুঁকিপূর্ণ ঝর্ণা বা ট্রেকিং রুটে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে, যেখানে ঝুঁকির মাত্রা এবং জরুরি যোগাযোগের নম্বর উল্লেখ থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় লাইফ জ্যাকেট, রশি, প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম ইত্যাদি সহজলভ্য করতে হবে। জরুরি উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন ও তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি ট্যুর অপারেটরদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। গাইডদের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘বিএনপি চায় উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক’

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বুধবার অংশ নেবে জামায়াত

ইসরায়েলের ২৮টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি ইরানের

কথিত সেই যুবদল নেতা ফের চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক

খুলনায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

ইসরায়েলে এবার ‘শাস্তিমূলক’ অভিযানের ঘোষণা

বিএনপি শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় : সালাহউদ্দিন

ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার

জনতার হাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আটক

নির্বাচনে বিএনপির অবশ্যম্ভাবী বিজয়ে অতিমাত্রায় আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই : প্রিন্স

১০

খামেনির অবস্থান শনাক্ত ও ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি ট্রাম্পের

১১

পাহাড়ের নিচে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র, ধ্বংস করতে পারবে না ইসরায়েল

১২

লা লিগার চাপে বার্সা, থমকে ট্রান্সফার পরিকল্পনা

১৩

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার বাসায় ইসরায়েলের হামলা

১৪

শতভাগ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে না ঐকমত্য কমিশন : এনসিপি

১৫

ভালুকায় সরকারি হাসপাতালে দুদকের অভিযান

১৬

বিদেশে বসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন না, প্রধান উপদেষ্টাকে চরমোনাই পীর

১৭

এক ভিসায় ভ্রমণ করা যাবে সৌদি দুবাই কুয়েত কাতার ওমান ও বাহরাইন

১৮

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা

১৯

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ / পরিবর্তিত বাস্তবতায় পিকেএসএফের কর্মকৌশল পরিবর্তন প্রয়োজন

২০
X