সুখেন নামের অর্থ ‘সুখের অধিকারী’। কিন্তু সুখেন বিশ্বাসের নামের সঙ্গেই শুধু রয়েছে সুখ শব্দটা; বাস্তবতা একেবারেই উল্টো। একটা সময় ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি সবই ছিল সুখেন-নমিতাদের; ছিল ভরা সংসার। সেসবই আজ অতীত। সব গিলেছে কপোতাক্ষ। ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে সুখেনরা সংসার বেঁধেছেন ডিঙি নৌকায়। তাতে ভেসেই বহমান নদের বুকে কাটছে তাদের জীবন।
সুখেন ও নমিতা বিশ্বাস দম্পতি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর মালোপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। কপোতাক্ষর ভাঙন তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব এই দম্পতি ১৫ বছর ধরে ঘর বেঁধেছেন ডিঙি নৌকায়। সব ঝড়-ঝাপটা মোকাবিলা করে টিকে রয়েছেন জীবনযুদ্ধে।
সুখেনের বয়স আশির ঘরে; নমিতার সত্তর। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তবে ছেলেমেয়েদের বিয়ের পর তাদের জীবন হয়ে গেছে যাযাবরের মতো। আয়ের উৎস বলতে কপোতাক্ষ, শিবসা ও শালিখা নদীর চর বা কূলে মাছ ধরা। সেই মাছ বিক্রির টাকায় জোটে অন্ন। মাঝেমধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে বৃদ্ধ দম্পতির। বেশিরভাগ সময় চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটই পেটে পড়ে তাদের। সুখেন বিশ্বাস বলেন, আমার ঘরবাড়ি, বাগ-বাগিচা, গরু, জায়গা-জমি সবই ছিল। এখন সব অতীত।
নমিতা বিশ্বাস বলেন, রাক্ষুসে নদ সব কেড়ে নিয়েছে। এটা আমাদের নিয়তি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে গেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে একমাত্র প্রার্থনা, শাখা-সিঁদুর নিয়ে যেন মরতে পারি।
তারা জানান, এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একটি ঘর পেতে দরখাস্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু জোটেনি। স্থায়ী একটি আবাস চান তারা। যেখানে একটু নিশ্চিতে মাথা গোঁজা যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মীর আনোয়ার এলাহী বলেন, তাদের সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। তাকে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, তারা যদি দুরবস্থায় থাকেন; তবে এলে সরকারিভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় তা করার চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন