আবিষ্কারের পর থেকে ওরস্যালাইন ডায়রিয়া আক্রান্ত মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা। এসএমসি ওরস্যালাইন দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার সকালে দৈনিক কালবেলা কার্যালয়ে কালবেলা এসএমসি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তারা এ কথা বলেন।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিম উদ্দিন খান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুকুমার সরকার, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির পলিসি স্পেশালিস্ট মো. মুসা মিয়া, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদের চেয়ারপারসন বাবুল কুমার অধিকারী, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশু রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সারাবন তাহুরা, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ এ সোবহানী, রাজধানীর লালবাগ আলহাজ আনোয়ার হোসেন শহীদ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিতা মহাপাত্র, কালবেলার বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন) পলাশ মাহমুদ ও কালবেলার স্বাস্থ্য সম্পাদক রাশেদ রাব্বি প্রমুখ।
দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মার সভাপতিত্বে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. তানিয়া রহমান মিতুলের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন কালবেলার উপসম্পাদক দীপঙ্কর লাহিড়ী।
এসএমসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিম উদ্দিন খান বলেন, ওরস্যালাইন আবিষ্কারের পর থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মহামারি ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করেছে। একসময় এ দেশে প্রতি বছর অন্তত তিন থেকে আটবার ডায়রিয়া হানা দিত। ওই সময় শিশুমৃত্যু হারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছিল ডায়রিয়ায়। তখন যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে ওরস্যালাইন। আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার, এসএমসির উৎপাদন, সরকারের সহায়তা আর ব্র্যাকের জনসচেতনতায় ওরস্যালাইন জীবনরক্ষাকারী হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে ওরস্যালাইন ডায়রিয়াজনিত কারণে পানিশূন্যতা পূরণে ভূমিকা রেখে চলছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুকুমার সরকার বলেন, ওরস্যালাইন জীবনরক্ষাকারী একটি বিষয়—এই তথ্য ঘরে ঘরে পৌঁছাতে আমাদের সময় লেগেছে। ডায়রিয়াজনিত কারণে শিশুমৃত্যু হার কমাতে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে বড় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ওরস্যালাইন।
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে খুব কম জিনিস গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে, তার অন্যতম এ ওরস্যালাইন। জীবনরক্ষাকারী ওরস্যালাইন অন্তত ৭ কোটি মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্বের বড় দুটি আবিষ্কার রয়েছে। একটি অ্যান্টিবায়োটিক, আরেকটি মুখে খাওয়ার স্যালাইন। অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহারে নানা ক্ষতিও আমরা জেনেছি। কিন্তু ওরস্যালাইন আবিষ্কারের পর থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় হিরোর মতো কাজ করছে। এই আবিষ্কার অবশ্যই নোবেলের দাবিও রাখে। বাংলাদেশ যা কিছুর জন্য বিশ্বের কাছে গর্বিত, তার অন্যতম ওরস্যালাইন। এ কাজে এসএমসি, ব্র্যাক, আইসিডিডিআর,বি ও সরকার প্রশংসার দাবিদার।
ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, নবজাতকও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা স্যালাইন খাওয়াতে পরামর্শ অবশ্যই দেব। তবে তার আগে মায়েদের বোঝাতে হবে নবজাতকের প্রথম প্রতিশোধক মাতৃদুগ্ধ। শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়াতে হবে। তারপর আমরা ওরস্যালাইনের পরামর্শ দেব।
মন্তব্য করুন