ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিমাদের স্বীকৃতি দেওয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমালোচনা করলেও দ্রুত গাজা যুদ্ধের অবসান চেয়েছেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, গাজায় সংঘাত দ্রুত বন্ধ হোক। এদিন আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বলেন, আমরা গাজার যুদ্ধ শেষ করতে চাই। অবিলম্বে এ সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্সের মতো প্রভাবশালী ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ ফোরামের পাঁচ সদস্যের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্র বাদে সবাই স্বীকৃতি দিল। এরপরও গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন থামছেই না। বরং গতকাল বুধবারও নগরীর আরও গভীরে ভারী বোমাবর্ষণ করেছে তারা। এদিন দখলদার বাহিনীর গুলি-বোমায় অন্তত ৬৪ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে—জাতিসংঘে ট্রাম্পের এমন উক্তির পরদিন গতকাল উপত্যকাজুড়ে ভারী বোমাবর্ষণ, বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালায় ইসরায়েল। গতকাল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হামলায় অন্তত ৬৪ জন নিহত হন। এদিন পূর্ব গাজা সিটির ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের প্রধান শাখায় বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
এর আগে গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া ত্রাণ-সহায়তা বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিয়ার সংগঠকরা দাবি করেছেন যে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত গ্রিস উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রে অবস্থানকালে তাদের বহরের একাধিক নৌকায় ড্রোন হামলা হয়েছে। এতে বিস্ফোরণ ও যোগাযোগ বিঘ্ন ঘটেছে। এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তারা। এক বিবৃতিতে তারা জানান, বহরের একাধিক নৌকায় একযোগে একাধিক ড্রোন আক্রমণ চালানো হয়, অজ্ঞাত বস্তু ফেলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা জ্যাম করা হয় এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ওই ত্রাণবহরকে সহায়তা করতে নৌবাহিনীর ফ্রিগেট পাঠাচ্ছে ইতালি। গতকাল দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুইদো ক্রোসেটো এ তথ্য জানান। এর মধ্যে গাজার উদ্দেশে পাঠানো ওই ত্রাণবহরে হামলার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ বললেন এরদোয়ান: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের ফলাফলে তিনি ‘সন্তুষ্ট’। বৈঠকের ফল নিয়ে ট্রাম্পও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ‘ইসরায়েল ছাড়া সব শক্তিধর দেশের’ সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক ‘সফল’ হয়েছে।
যদিও গাজা সিটিতে ইসরায়েল এখনো ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে চলেছে। সেখানে প্রতিদিন ডজন ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং হাজার হাজার মানুষকে জোরপূর্বক অজানা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বৈঠকের কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বৈঠকে মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নেতারা অংশ নেন।
ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজার যুদ্ধ শেষ করতে চাই। আমরা এটা শেষ করব। হয়তো এখনই শেষ করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। কারণ, আমরা এমন কিছু শেষ করতে যাচ্ছি, যা আদৌ শুরু হওয়াই উচিত ছিল না।’
‘ট্রাম্প যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার চান, গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে’: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ মঙ্গলবার বলেছেন, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট সত্যিই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে চান, তবে তাকে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
নিউইয়র্ক থেকে ফ্রান্সের বিএফএম টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, শুধু ট্রাম্পেরই ক্ষমতা আছে ইসরায়েলকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়ার। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘এ বিষয়ে কিছু করার ক্ষমতা একজনের আছে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’
মাখোঁ আরও বলেন, ‘আরেকটি কারণে তিনি (ট্রাম্প) আমাদের চেয়ে বেশি করতে পারেন। তা হলো, আমরা এমন কোনো অস্ত্র সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আমরা এমন কোনো সামগ্রী সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ চালানোর সুযোগ করে দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা করে।’
মন্তব্য করুন