শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩২ এএম
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ন্যাশনাল মেডিকেলে অনিয়মই নিয়ম

নিয়োগ আর কেনাকাটায় জালিয়াতি
ন্যাশনাল মেডিকেলে অনিয়মই নিয়ম

হাসপাতালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, সপ্তম গ্রেডের কোনো পদে নিয়োগ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। কিন্তু ‘অফিস তত্ত্বাবধায়ক’ নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই নিয়মের তোয়াক্কা করেনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি কোনোরকম পরীক্ষা ছাড়াই এই পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট (নার্স তত্ত্বাবধায়ক) পদের নিয়োগও হয়েছে একই প্রক্রিয়ায়। প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তি থাকলেও বাইরে থেকে অযোগ্য প্রার্থী এনে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শুধু জনবল নিয়োগে অনিয়ম নয়, কেনাকাটা আর উন্নয়নের নামেও ন্যাশনাল মেডিকেলে দেদার লুটপাট চলছে। নিয়ম থাকলেও কোনোরকম টেন্ডার ছাড়াই নানা ধরনের কেনাকাটা চলছে। কখনো কখনো টেন্ডার হলেও পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে সুবিধামতো শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। পুরান ঢাকার বহুল পরিচিত হাসপাতালটির কার্যক্রম বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জনসন রোডে অবস্থিত ৬০০ শয্যার এই হাসপাতালটি এক সময়ে পুরান ঢাকার মানুষের কাছে ‘বামরুনগ্রাদ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে নানা অনিয়ম আর লুটপাটে সেই সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সরকার বছরে ২২ কোটি টাকা অনুদান দিলেও বাকি খরচ চিকিৎসাসেবার আয় থেকে নির্বাহ করা হয়। এজন্য একটি পরিচালনা বোর্ড রয়েছে। তবে কিছু অসাধু চিকিৎসক, কর্মকর্তা আর বোর্ডের কয়েক জন সদস্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট গিলে খাচ্ছে সবকিছু।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ ও অনিয়মে জড়িয়েছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ইফফাত আরা, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) শফিকুল ইসলাম, হাসপাতালের মেডিসিন কর্মকর্তা মাকসুদুল আলম এবং অর্থোপেডিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার তানভীর হাসান। এর মধ্যে প্রথম তিনজন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটিতেও রয়েছেন।

অবিশ্বাস্য গতিতে নিয়োগ অফিস তত্ত্বাবধায়ক:

অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকার মামুন-অর-রশীদ নামের এক ব্যক্তিকে। কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই হাসপাতালের প্রশাসনিক পদটিতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগটিও হয়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। নথি যাচাই করে দেখা গেছে, মামুন-অর-রশীদ অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগ পেতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের কাছে আবেদন করেন। এর আগে ওই আবেদনে ১ নভেম্বর সুপারিশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ৩ নভেম্বর শুক্রবার তাতে সুপারিশ করেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এক দিনের ব্যবধানে ৫ নভেম্বর ওই পদে তার চাকরি হয়ে যায়! তাতে স্বাক্ষর করেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ইফফাত আরা। জনবল কাঠামো অনুযায়ী অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদটি হাসপাতালের ৪ নম্বর পদ। তার ওপরে আছেন শুধু সহকারী পরিচালক, উপপরিচালক ও পরিচালক। চাকরি বিধিমালায় বলা আছে, অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদটিতে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে পদোন্নতি দিতে হলে ৫ নম্বর পদের প্রধান সহকারী বা সমমানের পদে কমপক্ষে আট বছরের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাইরে থেকে কাউকে সরাসরি নিয়োগ দিতে হলে সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

তবে হাসপাতালে জমা দেওয়া মামুন অর রশীদের জীবনবৃত্তান্তে দেখা গেছে, তিনি ২০১৮ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন। অভিজ্ঞতায় তিনি লিখেছেন, বেসরকারি একটি ব্যাংকে তিন মাস ইন্টার্নশিপ করেছেন। এ ছাড়া ২০২০ সাল থেকে একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে হিসাব শাখায় চাকরি করেছেন, যা হাসপাতালের নিয়োগবিধির শর্ত পূরণ করে না।

মামুন-অর-রশীদের চাকরির সুপারিশের বিষয়ে কথা বলার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে তার মোবাইল নম্বরে খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

নার্স তত্ত্বাবধায়ক পদে গোপন নিয়োগ:

হাসপাতালটির চাকরিবিধি অনুযায়ী, নার্স তত্ত্বাবধায়ক (নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট) হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী নার্স তত্ত্বাবধায়ক পদে আট বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালেই এমন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালের কর্মরতকে পদোন্নতি না দিয়ে বাইরে থেকে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেখানে। এক্ষেত্রেও কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি, নেওয়া হয়নি কোনো পরীক্ষাও। যদিও হাসপাতালের নার্সিং বিভাগে এই পদটিই সর্বোচ্চ।

নথি যাচাই করে দেখা গেছে, গত ২২ অক্টোবর সুলতানা শাহানা নামে এক নার্সকে সপ্তম গ্রেডের ওই পদে নিয়োগপত্র দেন হাসপাতালটির পরিচালক। তাকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলা হলেও তিনি ২২ নভেম্বর যোগ দেন। নিয়োগপত্রের নির্দেশনা না মানলেও তার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে নিয়ম অনুযায়ী তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কথা থাকলেও সেদিন তিনি সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) শফিকুল ইসলামের অফিসে অবস্থান করেন। এরপর সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুর রহমান কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের তার স্বাস্থ্য সনদে আগের তারিখে (১৫ নভেম্বর) স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। চিকিৎসকদের শফিকুল ইসলামের কক্ষে ডেকে এনে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সিনিয়র একাধিক চিকিৎসক আগের তারিখে এবং পরীক্ষা ছাড়া স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরিচালকের নির্দেশ রয়েছে বলে জানানো হয়।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, নার্স তত্ত্বাবধায়ক পদে বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ দিতে হলে ওই প্রার্থীকে উপ-তত্ত্বাবধায়ক বা সহকারী তত্ত্বাবধায়ক পদে কমপক্ষে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের নিয়ম রয়েছে চাকরিবিধিতে। তবে সুলতানা শাহানা ওই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার আগে বেসরকারি দুটি হাসপাতালে চাকরি করেন। ওই হাসপাতালগুলোতে সহকারী নার্স তত্ত্বাবধায়ক পদই নেই।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা এবং নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া এবং যোগ্যতা না থাকলেও অফিস তত্ত্বাবধায়ক ও নার্সিং সুপারভাইজার পদে নিয়োগের বিষয়ে জানতে গত সোমবার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ইফফাত আরাকে ফোন করা হয়। তিনি তখন জাপান থেকে দেশে ফিরেছেন বলে জানান। এরপর এ প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই ব্যস্ত, আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারব না।’

এরপর তিনি লাইনটি কেটে দেন। পরে গত দুদিন ধরে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য জানতে চেয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি আর ফোনকল রিসিভ করেননি।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একজনকে ভালো পাইলে যে হাসপাতালে নিয়োগ দেব না, তা নয়। বাইরে একজনকে ভালো পেয়েছি। তাকে নার্সিং সুপারভাইজার হিসেবে এনেছি। বাইরে থেকে যাকে আনা হয়েছে, তার অভিজ্ঞতা আছে বলেই আনা হয়েছে। পরিচালক অর্গানোগ্রাম ফলো করেই নিয়োগ দিয়েছেন।’

অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদে মামুন অর রশীদের নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। এডহকের ভিত্তিতে জরুরি প্রয়োজনে অনেক নিয়োগ হয়। তবে এসব স্থায়ী নিয়োগ নয়।’

হাসপাতালে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও চিকিৎসকদের মধ্যে কানাঘুষা রয়েছে, অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগের জন্য ২৫ লাখ টাকা এবং নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই দুটি পদে বড় ধরনের ফাঁক রেখে নিয়োগে অনিয়ম করা হয়েছে। অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদে ‘এডহক’ ভিত্তিতে এবং নার্স তত্ত্বাবধায়ক পদে ‘অস্থায়ী’ নিয়োগের কথা উল্লেখ করে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও লিখিত পরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এভাবে গত চার বছরে বিভিন্ন বিভাগে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে এডহক বা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলেও সিন্ডিকেটের তৎপরতায় কিছু দিনের মধ্যেই তারা স্থায়ী হয়ে যান।

যন্ত্রপাতি কিনতে সন্তানসহ পাঁচজন নিয়ে জাপানে পরিচালক:

হাসপাতালটির জন্য সিটি স্ক্যান মেশিন এবং ফ্যাকো মেশিন কিনতে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু এই কেনাকাটায় একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে ফরমায়েশি শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। টেন্ডার অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কাজও পায়! এরপর সেই মেশিন দেখতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের টাকায় জাপান সফর করেন হাসপাতালটির পরিচালক, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) শফিকুল এবং মেডিসিন বিভাগের মাকসুদুল। ওই সফরে পরিচালকের ছেলেকেও নেওয়া হয় তাদের সঙ্গে। সমালোচনা এড়াতে হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের এক প্রতিনিধিকেও নেওয়া হয় সেই সফরে।

তবে হাসপাতাল সূত্র বলছে, প্রায় ৬ কোটি টাকার যন্ত্র কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও তা জানেনই না হাসপাতালের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক। টেন্ডার আহ্বানের পর কোনো যাচাই-বাছাই হয়নি। সবকিছু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শেষ করার পর তারা কোম্পানির টাকায় জাপান সফরে যান। যদিও তারা ওই মেশিন দুটির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন।

বোর্ড সভা ছাড়াই পঞ্চম গ্রেডে সহকারী পরিচালক!:

সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম এক সময়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রধান সহকারী বা হেড ক্লার্ক ছিলেন। সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে হন অফিস তত্ত্বাবধায়ক। নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ায় সেখানেই থেমে থাকতে হয়নি। পদোন্নতি পেয়ে এখন তিনি সহকারী পরিচালক (প্রশাসন)। অফিস তত্ত্বাবধায়কের নবম গ্রেডের এই পদ থেকে সরাসরি সপ্তম গ্রেডের সহকারী পরিচালকের পদে পদোন্নতি পেয়ে যান তিনি। সেখানেই শেষ নয়, সপ্তম গ্রেডের এই পদকে উন্নীত করেছেন পঞ্চম গ্রেডে।

হাসপাতালটির পরিচালনা বোর্ডের একজন সদস্য জানান, বোর্ড সভায় অনুমোদন ছাড়া কোনো পদে গ্রেড পরিবর্তন সম্ভব নয়। সেই অনুমোদন না থাকলেও ওই কর্মকর্তা পঞ্চম গ্রেডে বেতন নিচ্ছেন। হাসপাতালের সিন্ডিকেটটি তাকে ঘিরে পরিচালিত হওয়ায় তিনি এটা করতে পারছেন।

যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালে কোনোরকম সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া পঞ্চম গ্রেডে বেতন নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করে ও খুদেবার্তা পাঠিয়ে তার আর সাড়া পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের সদস্য শফিকুল ইসলাম এবং অর্থোপেডিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার তানভীর হাসপাতালের পরিচালকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তা ছাড়া পরিচালনা বোর্ডে চিকিৎসক প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার মাকসুদুল আলম। এই তিনজনকে দিয়ে হাসপাতালের উন্নয়ন কাজ ও কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের অনিয়ম করানো হয়। তাদের সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও হাসপাতালটির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম। পরিচালকের নেতৃত্বে তারা গত কয়েক বছরে হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন, এইচডিইউ, এনআইসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালাইসিস মেশিন কিনেছেন কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই। এ ছাড়াও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনও হয়েছে টেন্ডার ছাড়া। হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার কাজ হয় পছন্দের লোক দিয়ে।

জানতে চাওয়া হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম এসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্যকিছু জানার থাকলে বলেন।’

এরপর তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করেও তার আর সাড়া পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।

এদিকে চিকিৎসক মাকসুদুল আলমকে গত দুদিনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

পরিচালনা কমিটির সভা না হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেট:

হাসপাতাল সূত্র জানায়, পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে নিয়ম মতো বিভিন্ন উপকমিটি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী এক উপকমিটির আহ্বায়ক অন্য উপকমিটির সদস্য বা আহ্বায়ক থাকতে পারবেন না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উপকমিটিগুলো সিন্ডিকেটের সদস্যদের ঘিরেই করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম। ওই কমিটিতে সদস্য রয়েছেন চিকিৎসক মাকসুদুল আলম। ক্রয় উপকমিটি, কনডেমনেশন ও অকশন উপকমিটি এবং নিরাপত্তা উপকমিটির সদস্যও কাউন্সিলর সেলিম। প্রতিটি কমিটিরই সদস্য চিকিৎসক মাকসুদুল আলম। অবশ্য নিয়োগ উপকমিটি আর টেন্ডার ইভালুয়েশন উপকমিটির পদ দুটি নিজের কাছেই রেখেছেন পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি ও স্থানীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ। এই দুটি কমিটিতেও সদস্য হিসেবে আছেন চিকিৎসক মাকসুদুল আলম এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম।

পরিচালনা বোর্ডের দুজন সদস্য কালবেলাকে বলেন, একই ব্যক্তি নিয়োগ কমিটি, ক্রয় কমিটি, টেন্ডার কমিটি এবং অকশন কমিটির সদস্য থাকায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সহজ হয়ে গেছে হাসপাতালটিতে। সবকিছু পরিচালনা বোর্ডে সভাপতি আর পদাধিকার বলে সদস্য সচিব হাসপাতাল পরিচালকের ইচ্ছায় হচ্ছে। বোর্ড সভাপতি আবার স্থানীয় এমপি হওয়ায় কমিটির অন্যরা তার বিরাগভাজন হতে চান না।

ওই সদস্যরা বলছেন, বর্তমান বোর্ড গঠিত হয় চার বছর আগে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে অন্তত একটি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ চার বছরে মাত্র দুটি বোর্ড সভা হয়েছে! এর একটি হয়েছে কমিটি গঠনের পর অভিষেক অনুষ্ঠান, অন্যটি করোনার সময়ে ভার্চুয়াল সভা হয়। বোর্ড সভা না হওয়ায় কারও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। সেই সুযোগে যত অনিয়ম ও দুর্নীতি ভর করেছে হাসপাতালটিতে।

বোর্ড কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ কালবেলাকে বলেন, ‘ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সব নিয়ম মেনেই করা হয়। আমরা তো হাসপাতালে বসে থাকি না। মাসে একবার বা দুইবার যাই। এখন যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা এক সময় এই হাসপাতাল ডুবিয়েছে। জেনে দেখবেন তাদের স্বার্থ আছে এসবের পেছনে।’

নিয়মিত বোর্ড সভা হচ্ছে দাবি করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘গত দশ বছরে হাসপাতালে সেবার মনোন্নয়নে কাজ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ারকে হাসপাতালের পরিচালক পদে আনা হয়েছে। আগে তিন চার মাসে বেতন দেওয়া যেত না, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাসের ১ তারিখে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাল ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১০

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১১

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১২

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৩

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৪

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

১৫

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১৬

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

১৭

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

১৮

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

১৯

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

২০
X