বহু পরিচয়ে সুপরিচিত জহুর আহমদ চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, শ্রমিক নেতা, ভাষাসৈনিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন সরকারের পূর্ণমন্ত্রী। সেই জহুর আহমদ চৌধুরীর কবরটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়।
চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পল্টন রোডের কবরস্থানে তিনি শায়িত আছেন তারই আধ্যাত্মিক গুরু হজরত দানিশ শাহ চিশতির (রহ.) মাজারের পাশেই। জহুর আহমদ চৌধুরীর বড় ছেলে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরীর কবরও এ জায়গায়। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন।
জহুর আহমদ চৌধুরী ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই মারা যান। তার মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে শোক বিবৃতিতে তাকে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন সংসদ নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহুর আহমদ কলকাতা থেকে বহু দূরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আগরতলায় অবস্থান করে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘লিবারেশন কাউন্সিল ইস্টার্ন জোন’ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
কবরস্থানটির প্রবেশপথেই রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি স্থায়ী ডাস্টবিন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ যেন সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়। প্রতিবছর ১ জুলাই জহুর আহমদ চৌধুরীর কবরে ফুল দিতে যান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, এমপিসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী। শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যান সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলররা। কিন্তু কারও চোখে পড়ে না ডাস্টবিনটি! সরে না ডাস্টবিন।
জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কবরস্থান নিয়ে এমন অযত্ন-অবহেলা আর সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে, দেশ ছেড়ে চলে যাই। আমাদের কোনো দাম নেই। কোনো অবদান নেই।’
জহুর আহমদ চৌধুরীর দ্বিতীয় সন্তান চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছে করলেও ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক কারও স্মৃতিচিহ্ন কেউ মুছে ফেলতে পারে না। এমন একদিন আসবে, যেদিন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর খুঁজে খুঁজে বের করবে পরবর্তী প্রজন্ম। তাদের যথাযথ সম্মান জানাবে জাতি।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জহুর আহমদ চৌধুরীর মতো গুণীজনের কবরস্থানে ঢোকার পথে স্থায়ী ডাস্টবিন কোনোভাবেই শোভন নয়। এটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলা জরুরি। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হতে হবে। তবে বিকল্প জায়গা না পেলে প্রয়োজনে ওই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন চালু করা যায় কি না, তা ভাবতে হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, ‘ডাস্টবিনটির বয়স প্রায় ৪৯ বছর। বর্তমানে এটি সরিয়ে ফেলতে চিন্তাভাবনা চলছে।’
সিটি মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণের চিন্তাভাবনাও আছে।’
মন্তব্য করুন