এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশে মোট ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদি পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারি মালিকরা; কিন্তু ঈদের দিন বৃষ্টি, লবণের দাম বেশি এবং কাঁচা চামড়ার দাম কম হওয়ায় অনেকে তা সংরক্ষণ করেননি। সরকার এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ এবং ছাগলের চামড়ার বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে। ফলে গতবারের তুলনায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ কম হওয়ার শঙ্কা রয়ে গেছে। যদিও খাত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে; কিন্তু চামড়ার মান নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।
জানা যায়, দেশে চামড়ার চাহিদার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পূরণ হয় কোরবানির পশু থেকে। এসব চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবণের দাম ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় বস্তায় প্রায় ৩০০ টাকা বেড়েছে। চলতি ঈদ মৌসুমে প্রতি বস্তা লবণ (৭৪ কেজি) ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত।
ঈদের দিন থেকে পরবর্তী দুই দিন পশু কোরবানি করা হয়। এ সময়ের মধ্যে এতিমখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহের পর লবণজাত করে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিবারের মতো এ বছরও সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরের ট্যানারি শ্রমিকরা চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারের চামড়া শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৮৭৯ পিস চামড়া।
চামড়া শিল্পনগরী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ঈদের পরের সপ্তাহে শুধু ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার চামড়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করবে। এ প্রক্রিয়া আগামী দুই মাস পর্যন্ত চলবে। ৪ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৩ হাজার ৮৭৯টি পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরুর চামড়া ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯ পিস, মহিষের ৩০২ পিস এবং ছাগলের চামড়া সংগ্রহ হয়েছে ৫৩ হাজার ৯০৭ পিস।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ভাইস চেয়ারম্যান ও সমতা লেদার কমপ্লেক্সের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ঈদের পর থেকে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লবণজাত চামড়া সংগ্রহ প্রায় শেষের দিকে। কয়েক দিনের মধ্যে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চামড়া ঢাকায় আসতে শুরু করবে। এ বছর ঈদের দিন বৃষ্টির কারণে চামড়া সংগ্রহে সমস্যা হয়েছে। সেজন্য ৫ থেকে ১০ শতাংশ চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি সংগ্রহ হওয়া চামড়ায় লবণ দিতে দেরি হওয়া এবং লবণের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে কম পরিমাণ লবণ দিয়েছে। এতে আরও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য এ বছর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়া সঠিক ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
এদিকে চামড়ার দাম কম হওয়ায় বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের চামড়ার মান খারাপ হয়েছে বলে জানা গেছে। কোরবানিদাতাদের চামড়া সংরক্ষণ বা বিক্রিতে আগ্রহ কম থাকায় এটি হচ্ছে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে ঢাকা ও দেশের উত্তর অঞ্চলের চামড়ার মান ভালো ছিল। সেখান থেকে একটু বেশি দামে চামড়া কিনেছেন ট্যানারি মালিকরা।
মন্তব্য করুন