ভেতরে ১২০০ থেকে ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। সেই আগুনে জ্বলেপুড়ে একাকার চিনি ও কেমিক্যাল। পুড়তে পুড়তে লাভায় রূপ নিয়েছে এসব চিনি। তা নেভাতে দেওয়া পানিতে মিশে ভেসে যাচ্ছে রাস্তায়। স্তূপে স্তূপে জমাট বেঁধেছে সড়কে। দুদিন ধরে পুড়ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অবস্থিত এস আলম সুগার মিলের গুদাম। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় লাগা এ আগুন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে চিনির বাজারে প্রভাব পড়বে না। আগুন নিভলে দুদিনের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারবে কারখানাটি।
গতকাল বিকেলে ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জসিম উদ্দিন বলেন, আগুন লাগা গুদামটিতে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি মজুত ছিল। সেগুলো এক ধরনের দাহ্য পদার্থ। পানি দিয়ে এ আগুন নেভানো যাচ্ছে না। এ কারণে নেভাতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। তবে আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, কখন নেভানো যাবে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে। গুদামটিতে চারপাশ থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে।
টিন খুলে ফেলা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা শুরু হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টায়ও ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তাদের সঙ্গে যোগ দেন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা। যৌথ চেষ্টার পর রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখান থেকে আগুন আর ছড়াবে না। আগুন পুরোপুরি নেভানোর চেষ্টা করছি আমরা।
পরে রাতেই এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা এ কমিটি গঠন করেন।
রিমোট দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
সোমবার রাতে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হলেও গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় ফের জ্বলতে দেখা যায়। তবে এ আগুন গুদাম থেকে বাইরে ছড়ায়নি।
ঘটনাস্থলে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, আগুন নির্বাপণের অত্যাধুনিক যন্ত্র লুফ-৬০ দিয়ে রিমোটের সাহায্যে সকাল থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ যন্ত্রটি দিয়ে প্রতি মিনিটে ৩ হাজার লিটার হারে পানি ছাড়া সম্ভব। আমরা ১ হাজার লিটার হারে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক বলেন, সোমবার থেকেই আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অত্যাধুনিক যন্ত্র লুফ-৬০ দিয়ে রিমোটের সাহায্যে পানি দেওয়া হচ্ছে। তিনটি পাম্প একসঙ্গে যে পানি সরবরাহ করতে পারে, এই যন্ত্র একাই সে পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে পারে। যেখানে আগুনটি লাগে এর দক্ষিণ পাশেই রয়েছে আরেকটি বড় গুদাম রয়েছে। কারখানাটির অন্যান্য অংশেও যেন আগুন ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। প্রায় ৭টি লাইন দিয়ে আমরা তা বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়েছি এখন পর্যন্ত। যার কারণে আগুনটি ছড়াতে পারেনি। এ আগুন এখন পর্যন্ত গুদামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আগুন নেভাতে কত সময় লাগতে পারে
চিনির কাঁচামালগুলো দাহ্য পদার্থ। সেগুলো না সরানো পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে দুই থেকে তিন দিন লেগে যেতে পারে।
মঙ্গলবার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে চরলক্ষ্যা এলাকায় এস আলম সুগার মিলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব কথা জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গোডাউনের ভেতরে ১২০০ থেকে ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগুন জ্বলছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঢুকতে পারছেন না, কারণ আগুনের তাপমাত্রা বেশি।
বাজারে প্রভাব পড়বে না
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিনি নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ছিনিমিনি খেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) মাসুদ। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা এ ধরনের পরিস্থিতিকে পুঁজি করতে চান। তবে আমাদের কাছে সরবরাহ করার জন্য চিনির পর্যাপ্ত স্টক রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।’
রমজানে চিনির সরবরাহে এ অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি গোডাউনে আগুনে লেগে চিনির কাঁচামাল পুড়ে গেছে। তা অপরিশোধিত চিনি ছিল। তবে এসবকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দু-এক দিনের জন্য কারসাজি করতে পারে। তবে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো দু-এক দিনের জন্য হবে। তার পর থেকে প্রোডাকশন শুরু হয়ে যাবে। প্রোডাকশন চালু করব এবং বানানো মাল আছে। তা দিয়ে এক সপ্তাহ মিনিমাম চলবে। প্রোডাকশনে যেতে লাগবে দুই দিন। আর সমস্যা হবে না।’