শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২
আবু শামা, কুবি
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩১ এএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তথ্য গোপন করে উপাচার্য হয়েছেন অধ্যাপক মঈন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্য গোপন করে উপাচার্য হয়েছেন অধ্যাপক মঈন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ থেকে চাকরি ছেড়ে আবার সেই বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের আগে তার ফাইলে উল্লেখ ছিল তিনি ওই বিভাগের নিয়মিত অধ্যাপক। ফলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সেই তথ্য গোপন করেই তিনি কুবির ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এদিকে, ২০১১ সালে চাকরি ছাড়লেও ঢাবির নিয়মিত শিক্ষক উল্লেখ করায় তাকে দুবার ইনক্রিমেন্ট দিয়েছে কুবির অর্থ দপ্তর। তিনি সেটি গ্রহণও করেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির অফিস স্মারক অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অন্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের আগ মুহূর্তে পাওয়া শেষ বেতন চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অথবা উভয় পক্ষের সম্মতিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত বেতনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকালীন চাকরির জন্য কোনো বর্ধিত পেনশন বা ইনক্রিমেন্ট পাবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুবি উপাচার্য অধ্যাপক মঈন ২০১১ সালে ঢাবির ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক থাকাকালীন চাকরি ছেড়ে দেন। তখন তিনি গ্রেড-৩ এর অধ্যাপক ছিলেন। চাকরি ছেড়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাবির একই বিভাগে চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তাকে কুবি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হলে ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাবি তার সঙ্গে ওই চুক্তি বাতিল করে।

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে ৬৮ হাজার ৭৭০ টাকা বেতন পেয়ে আসছিলেন অধ্যাপক মঈন। পরবর্তী সময়ে কুবি থেকে দুবার ইনক্রিমেন্ট নিয়ে বর্তমানে তিনি ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা করে পাচ্ছেন। তবে তিনি ঢাবির সঙ্গে চুক্তিতে থাকাকালীন আরও কম বেতন পেতেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্য গোপন করে অধ্যাপক আবদুল মঈন উপাচার্য হয়েছেন এবং অনৈতিকভাবে ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করেছেন।

কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তিনি (অধ্যাপক মঈন) বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি সেটি নিতে পারেন না। এটি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি এবং বেআইনি কাজ।

আবু তাহের বলেন, অবসর বা চুক্তিতে নিয়োজিত থাকা ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন ভিন্ন হয়। কিন্তু অধ্যাপক মঈন উপাচার্য হওয়ার সময় চুক্তিতে থাকার তথ্য গোপন করেছেন। ভুল তথ্য দিয়ে উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার তার নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, অধ্যাপক মঈন ভুল তথ্য দিয়ে উপাচার্য হয়েছেন। তিনি গবেষণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষদে ভুয়া বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। সেজন্য তার বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামানের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭০ জনের মতো শিক্ষক আছে। কার কখন ইনক্রিমেন্ট হয় এটা কি কোষাধ্যক্ষ বসে বসে গুনবে? অর্থ দপ্তরে যিনি বেতন দেখেন (আবু তাহের), তিনি হয়তো ভুল করছেন।’

জানতে চাইলে কুবির অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মো. আবু তাহের বলেন, ‘তার (অধ্যাপক মঈন) নিয়োগপত্রে কোথাও লেখা নেই যে, তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। সে কারণে আমরা ধরেই নিয়েছি তিনি নিয়মিত শিক্ষক। সে হিসেবে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো ভুল নেই। আমরা শুধু আদেশ পালন করি, যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।’

দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেভাবে কাগজ দেওয়া হয়েছে সেভাবেই বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। তার (উপাচার্য) নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে কোথাও লেখা নেই যে, তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত।’ তবে তথ্য গোপনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইনক্রিমেন্ট যদি নিয়ে থাকি তাহলে ফেরত দেব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দলে দলে ঘরে ফিরছে হাজারো গাজাবাসী

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

রাজধানী থেকে বগুড়া শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে :  এ্যানি

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া

দেশের ৪০ শতাংশ নারী থাইরয়েডে আক্রান্ত!

‘এই পচা চালের ভাত কীভাবে খাব’

‘পুলিশ এখন বানরের মতো’ বললেন ওসি হাবিবুল্লাহ

১০

ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে আর্জেন্টিনা

১১

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে একমাত্র পথ সুষ্ঠু নির্বাচন : নীরব

১২

যশোরের ৪ মহাসড়কে মহাদুর্ভোগ

১৩

সুদের টাকা না পেয়ে ঘরের টিন কাঠ খুঁটি খুলে নিলেন ইমাম

১৪

সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মৃত্যুতে ঢাবি সাদা দলের শোক

১৫

কিউইদের কাছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শোচনীয় পরাজয়

১৬

বিএনপি আইনের শাসনে বিশ্বাসী : ব্যারিস্টার অসীম

১৭

প্রত্যেক উপদেষ্টা বিদেশি নাগরিক : রুমিন ফারহানা

১৮

বিশ্বকাপ দলে ডাক পেলেন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

১৯

ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হতে যাচ্ছে : প্রেস সচিব

২০
X