দীর্ঘ এক দশক পর গতকাল শনিবার রাজধানীতে ইনডোরে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং ওলামায়ে কেরামের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত। নানা নাটকীয়তার পর গত শুক্রবার রাতে কিছু মৌখিক শর্তে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সমাবেশের অনুমতি দিলে গতকাল দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে জামায়াত। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ মার্চ অনুমতি নিয়ে রাজধানীর মতিঝিলে সমাবেশ করেছিল দলটি। মিলনায়তনে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের খোলা জায়গায় এবং সড়কে কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হলে মৎস্য ভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করেন এবং দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন। সমাবেশ ঘিরে চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।
ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। এ সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মতিউর রহমান আকন্দ, ড. মোবারক হোসাইন, মহানগরী উত্তরের আব্দুর রহমান মুসা, ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, দক্ষিণের ড. হেলাল উদ্দিন, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, ড. আবদুল মান্নান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমির আব্দুল জব্বার, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সুতরাং বলব, ২০১৪ ও ২০১৮ গেছে যাক। এবার ২০২৪ আর সেভাবে যাবে না। যদি আওয়ামী লীগ বুঝে, তাহলে আসুন আলোচনা করুন। এবারের নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দাবি আদায়ে যা করা দরকার আমরা সেই আন্দোলন করব, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, জামায়াত কখনো বিশৃঙ্খলা করেনি, করে না এবং করবে না। যদি হয়, সেটা কেউ বাইরে থেকে করতে পারে, স্যাবোটেজ। জামায়াত সন্ত্রাস, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এবং হামলায় বিশ্বাস করে না। জামায়াত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সুশৃঙ্খল আদর্শিক দল। যারা সোনার বাংলা গড়তে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা ব্যর্থ।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করতে গিয়ে সরকার নিজেদের ক্ষতি করেছে। নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে আমরা মুক্তি দিতে বাধ্য করব, ইনশাআল্লাহ। জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করবে। বিশৃঙ্খলা জামায়াতের ঐতিহ্যে নেই।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, যারা আমাদের নিষিদ্ধ ও অবৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করেছে, তারাই আজ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল সমাবেশের অনুমতি দেওয়া ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
মন্তব্য করুন