বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক জিয়ত কুণ্ড সংরক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। প্রতিনিয়ত দর্শনার্থী ও স্থানীয় মানুষের ফেলা ইট-পাথর-মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে উন্মুক্ত কুয়াটি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে হারিয়ে যাবে কিংবদন্তি ঘেরা এ কুয়াটি। পাশাপাশি রাজা পরশুরামের ইতিহাসও বিলীন হয়ে যাবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, ইতিহাসের অংশ এ জিয়ত কুণ্ড। এর প্রত্নগুরুত্ব অপরিসীম। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে কুয়াটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গনগরী মহাস্থানগড়ের রাজা পরশুরাম প্যালেসের পূর্ব দিকে জিয়ত কুণ্ডর অবস্থান। পরশুরামের প্যালেসের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় দেড়শ ফুট। এটার পাশেই রয়েছে মূল সাম্রাজ্যের প্রধান ফটক, যেটি বর্তমানে পরশুরাম গেট নামে পরিচিত। আর পূর্ব পাশে রয়েছে সেই জিয়ত কুণ্ড। প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী আসেন রাজা পরশুরামের প্যালেস দেখতে। সঙ্গে দর্শন করেন জিয়ত কুণ্ড।
জিয়ত কুণ্ড প্রসঙ্গে জানা যায়, কুয়াটির ওপরের ব্যাস ৩ দশমিক ৮৬ মিটার এবং নিচের দিকে ক্রমহ্রাসমান। একটি চতুষ্কোণ গ্রানাইট পাথরখণ্ড কূপের ভেতর উপরিভাগে পূর্বদিকে বসানো রয়েছে। ধারণা করা হয়, পানি তোলার সুবিধার্থে এটি ব্যবহার করা হতো। কূপটির তলদেশ পর্যন্ত দুই সারিতে আর বেশ কিছু পাথরের খণ্ড নির্মাণের সময়ই যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, রাজা পরশুরামের শাসনামলে কূপটি খনন করা হয়েছিল। সে অনুসারে কূপটি খনন করা হয় ১৮০০ থেকে ১৯০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পরশুরাম প্রাসাদের নির্মাণকালে।
মহাস্থানগড়ের স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, এটা জাদুকরী কূপ ছিল বলে আমরা বাপ-দাদার কাছে গল্প শুনেছি। আহত সৈন্যদের এই কূপে ফেলে দিলে তারা সুস্থ হয়ে উঠত বলে শুনেছি।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার খোট্টাপাড়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম গত রোববার তার বেয়াইকে জিয়ত কুণ্ড দেখাতে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, আজ থেকে ৪০ বছর আগে বাবার হাত ধরে তিনি এই কূপটি দেখতে এসেছিলেন। তখন কূপটি অনেক গভীর ছিল। নিচের দিকে তাকালে ভয়ে গা শিউরে উঠত। আর এখন ইট-পাথরে ভরে গেছে। শুধু তাই নয়, এখন অনেকেই কূপে নেমে পড়েন। তিনি কূপটি সংরক্ষণের দাবি জানান।
মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা বলেন, জিয়ত কুণ্ড প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।