চলতি মাসের শুরুর দিকে রাজধানীর ফার্মগেটে ছিনতাইকারী দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার। এরপর পুলিশ ছিনতাইকারী, দস্যু ও ডাকাত ধরতে রাজধানীজুড়ে চালাচ্ছে বিশেষ অভিযান। টানা এই অভিযানেও থেমে নেই খুনোখুনি। মাঝেমধ্যেই রাজধানীতে নৃশংসভাবে খুন হচ্ছে মানুষ, সড়কে মিলছে লাশ। গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ‘শান্ত’ থাকা ঢাকায় হঠাৎ করে বেড়েছে খুনোখুনি। এর মধ্যে গত শনিবার রাতে শেরেবাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে মেলে জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা সালাম মিয়ার লাশ। এর এক দিন পরই ধানমন্ডির সড়কে খুন হন আইডিয়াল কলেজছাত্র আদনান সাঈদ রাকিব। গত মঙ্গলবার রাতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হন হাসান হাওলাদার নামে এক যুবক। শুধু তাই নয়, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের সড়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা অলিউল্লাহ রুবেলকে। দুর্বৃত্তরা তাকে ধাওয়া করে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সড়কেই লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। সেই নৃশংস দৃশ্য ধরা পড়ে ওই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিলের লেক থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের লাশ। শরীরে পচন ধরায় হত্যা বা মৃত্যুর ধরন সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোয় নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির একটা বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। খুন, চুরি-ছিনতাই বাড়ছে। এগুলো বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ বা প্রেক্ষাপট রয়েছে। কিছু ঘটনা রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে, চুরি-ছিনতাই, ঘরের বাইরে বা রাস্তায় খুন—এগুলো নিরাপত্তা পদক্ষেপের
ঘাটতির কারণে হচ্ছে। এই ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, অভিযানে অপরাধীরা গ্রেপ্তার হলেও সহজেই তারা জামিনে বেরিয়ে যেতে পারছে। এজন্য তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর দ্রুত বিচার নিশ্চিত বা পেশাদার চোর-ছিনতাইকারীদের পুনর্বাসন করার পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধ যাতে ঘটতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আগাম যে পদক্ষেপগুলো, তা জোরালোভাবে নিতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশিরভাগ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন আইডিয়াল কলেজছাত্র রাকিব। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেপি নেতা সালাম মিয়াকে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে খুন করে লাশ ফেলা হয়েছিল ঢাকায়। ওই ঘটনায় দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে যাত্রাবাড়ী ও শাহজাহানপুরে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জেপি নেতা হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি যুক্তরা গ্রেপ্তার হয়নি। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল আলম গতকাল শুক্রবার কালবেলাকে বলেন, হাসান হাওলাদার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যারহস্য বের হবে। নিহত ব্যক্তি সায়েদাবাদে গাড়ি মেরামতের একটি গ্যারেজে কাজ করতেন। এদিকে শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক অলিউল্লাহ রুবেলের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ওই থানার ওসি ফারুকুল আলম বলেন, পূর্বশত্রুতা নাকি অন্য কোনো কারণে ওই নেতাকে খুন করা হয়েছে, তার তদন্ত চলছে। পাশাপাশি জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে একাধিক টিম কাজ করছে। হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধারের বিষয়ে ওই থানার ওসি শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় নিশ্চিত হলে জানা যাবে তিনি লেকের পানিতে পড়ে মারা গেছেন, নাকি কেউ তাকে হত্যা করে ফেলেছে।
মন্তব্য করুন