বাড়িতে, অফিসে বা ভ্রমণরত অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য জরুরি। সেজন্য প্রয়োজন গ্লুকোমিটার নামের যন্ত্রটি। গ্লুকোমিটার থাকলে সহজে ঘরে বসে নিজেই কাজটি করতে পারেন আক্রান্ত রোগী। যন্ত্রটি হাতের কাছে রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
গ্লুকোমিটারের ব্যবহার: বাজারে নানা মানের ও ব্র্যান্ডের গ্লুকোমিটার পাওয়া যায়। গ্লুকোমিটার মানসম্মত না হলে সঠিক ফল না-ও পেতে পারেন। আবার এর স্ট্রিপ (যেটিতে রক্ত ফেলা হয়) সহজলভ্য কি না, সেটা জেনে নিন।
যেভাবে পরীক্ষা করবেন: ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে শুকিয়ে নিন। অ্যালকোহল প্যাড বা জীবাণুনাশক দিয়ে আঙুল পরিষ্কার করে নিতে পারেন, তা পুরোপুরি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। গ্লুকোমিটারে একটি পরীক্ষার স্ট্রিপ প্রবেশ করান। গ্লুকোমিটারের মডেল ভেদে স্ট্রিপ আলাদা হয়, তাই শুধু আপনার মিটারের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্রিপ ব্যবহার করুন। সুই বা ল্যানসেট (যা একটি কলমের মধ্যে থাকে) দিয়ে আপনার হাতের আঙুলের অগ্রভাগ ফুটো করুন। প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন আঙুল ব্যবহার করুন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয়ে আসা এক ফোঁটা রক্তই যথেষ্ট। প্রয়োজনীয় রক্তের পরিমাণ গ্লুকোমিটারভেদে ভিন্ন (০.৩ থেকে ১ মাইক্রো লিটার) হতে পারে। খুব কম বা ছোট রক্ত হলে এরর আসতে পারে। মিটারটি কয়েক সেকেন্ড বা বড়জোর এক মিনিট পর আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পর্দায় প্রদর্শন করবে। তারিখ ও সময় দিয়ে লিখে রাখুন। ব্যবহৃত সুই এবং স্ট্রিপ নির্দিষ্ট ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন। নির্দেশনা অনুযায়ী যন্ত্রটি নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং মান নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা করুন। চিকিৎসককে দেখানোর সময় গ্লুকোমিটার বা গ্লুকোজের চার্ট সঙ্গে আনুন, যাতে রেকর্ড করা গ্লুকোজের মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।
গ্লুকোমিটার নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা: অনেকের মনে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে যে, গ্লুকোমিটার ও ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা গ্লুকোজের মাত্রা হয়তো ভিন্নতর হতে পারে। গ্লুকোমিটারে গ্লুকোজ মাপার জন্য কৈশিক নালির রক্ত ব্যবহার করা হয়, ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা হয় শিরা থেকে সংগৃহীত রক্তের প্লাজমা। আগে প্লাজমায় মাপলে গ্লুকোজ রক্তের গ্লুকোজের চেয়ে সাধারণত ১০ শতাংশের মতো বেশি হতো, যা প্রায় কাছাকাছি এসে গিয়েছে নতুন মডেলের মেশিনগুলোতে। তাই, মনে দ্বিধা না রেখে প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর একটি করে নতুন ধরনের গ্লুকোমিটার থাকা এবং এর যথাযথ ব্যবহার করা আবশ্যক।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন