জরায়ু ক্যান্সার বা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার একটি নীরব অথচ ভয়ংকর রোগ, যা নারীর প্রজনন ব্যবস্থাকে মারাত্মক প্রভাবিত করে। এর প্রভাব গভীর হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা শুরু হলে এটি থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব।
জরায়ু ক্যান্সারের জটিলতা: জরায়ু ক্যান্সার যদি যথাসময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা একজন নারীর স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউব বা মূত্রাশয়ের মতো অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে এ রোগের চিকিৎসা আরও দুরূহ হয়ে উঠতে পারে। অন্ত্র এবং মূত্রাশয়ের কর্মহীনতা প্রস্রাব এবং মলত্যাগে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যথা এবং অস্বস্তি, যা একজন নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধাগ্রস্ত করতে পারে। মেটাস্টেসিস-লিভার এবং ফুসফুসের মতো দূরবর্তী অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে জীবনের ঝুঁকি হতে পারে।
কেন হয়: এন্ডোমেট্রিয়াম কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে জরায়ু ক্যান্সার হয়।
ঝুঁকিতে কারা: বয়স ৬০ বা তদূর্ধ্ব বয়সের নারীদের হয়, যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে। রিপ্রোডাকটিভ বয়সে পলিস্পিটিক ওভারিয়ান সিনড্রোম রোগে ভুগলে। অনিয়মিত মাসিক হলে। ৪০ বছর বয়সের পর জোরালো মাসিক প্রবাহ হলে। বন্ধ্যত্ব থাকলে। ডিএমআই এইচটিএস থাকলে। অতিরিক্ত ওজন থাকলে। ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে। এস্ট্রোজেন হরমোন থেরাপি নিলে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য ট্যামোজেফিন সেবন করলে। আগে কোনো ক্যান্সারের জন্য আরটি নিলে। কম বয়সে মাসিক শুরু হলে ও দেরিতে মেনোপজ হলে।
উপসর্গ: মেনোপজের পর ভেজাইনাল ব্লেডিং হলে। দুর্গন্ধযুক্ত স্রাবগেলে (মেনোপজের পর)। নিচের পেটে ব্যথা থাকলে।
প্রকারভেদ: হিস্টোপেথোলজিক্যাল প্রকারভেদ—টাইপ ১: এন্ডোমেট্রয়েড অ্যাডেনোকার্সিনোমা তুলনামূলকভাবে কম ছডায়। টাইপ ২: নন-এন্ডোমেট্রয়েড অ্যাডেনোকার্সিনোমা দ্রুত ছড়ায়।
আণবিক প্রকারভেদ—১. POLE রূপান্তরিত। (৭-৯%)। ২. d MMR ১৫-২০%। ৩. P53 রূপান্তর (২৫-৩০%) ৪. অনির্দিষ্ট- (এনএসএমএফ) (৫০-৫৫%)।
ফিগো স্টেজিং—স্টেজ-১: ক্যান্সার জরায়ুর মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্টেজ-২: ক্যান্সার সসারভিক্সে ছড়ায়। স্টেজ-৩: ক্যান্সার ডিম্বাশয় ও ভেজাইনাতে ছড়ায়। স্টেজ-৪: মূত্রথলি ও Recturn-এ ছড়ায়।
পরীক্ষা: ১. টিভিএস, ২. এন্ডোমেট্রিয়াল স্যাম্পলিং, ৩ ফ্র্যাকশনাল কিউরেটেজ, ৪. হিস্টেরোস্কোপি, ৫. পেলভিকের এমআরআই ও ৬. ডাব্লিউ/এ সিটি স্ক্যান।
চিকিৎসা: ১. হিস্টেরেক্টমি প্রাথমিক পর্যায় (সরল, র্যাডিকাল), ২. কেমোথেরাপি, ৩. রেডিওথেরাপি, ৪. হরমোন থেরাপি, ৫. Fmnero থেরাপি ও ৬. লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি।
ডা. পবিনা আফরোজ পারভীন
স্ত্রীরোগ, প্রসূতি এবং স্ত্রীরোগ ক্যান্সার ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন
কনসালট্যান্ট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
চেম্বার: আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০
মন্তব্য করুন