একটু বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা পড়লেই নাকের সঙ্গে শুরু হয় হাতের বোঝাপড়া। এতে নাক দিয়ে রক্তও আসে। এমনটা অস্বাভাবিক নয়। আবার কিছু না করলেও অনেক সময় দেখা যায় নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টা সাধারণ না-ও হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়া কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। লিখেছেন ডা. উজ্জ্বল কুমার রায়।
কারণ
নাক থেকে রক্ত আসার পেছনে কিছু বিশেষ কারণ থাকে। যেটা জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণত আঘাত লাগলে, নাকে বারবার হাত ঘষলে, সাইনাসের সমস্যা থাকলে, মশা মারার বিভিন্ন গন্ধযুক্ত ওষুধ থেকে অথবা প্রেশার বেড়ে গেলে কিংবা রক্তের কোনো সমস্যা হলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। এ ছাড়া কোনো কোনো বিশেষ রোগের কারণেও নাক থেকে রক্ত ঝরতে পারে।
অনেকের বেশি গরমে নাক থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। আবহাওয়া গরম হলে গরম বাতাস যখন নাকের ভেতর ঢোকে তখন নাকের ভেতরকার মিউকাস মেমব্রেন অতিরিক্ত গরম হয়ে জ্বলুনি তৈরি করে। তখন বারবার নাকে হাত চলে যায় সেই জ্বলুনি থামাতে। তাতেই নাকের ওই স্থানের শিরা নষ্ট হয়ে বা ফেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
আবার যাদের শীতে নাক থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা শুকনো বাতাস বারবার নাকের কিছু শিরায় রক্ত প্রবাহের সমস্যা সৃষ্টি করে যেখানে বারবার আঙুল দিতে ইচ্ছে করে। এতেও শিরা ছিঁড়ে রক্ত পড়তে পারে।
সাধারণভাবে বাচ্চাদের নাক থেকে রক্ত পড়ার কারণ আঘাতজনিত। সাইনুসাইটিস থেকে বেশি রক্ত পড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের। বয়স্কদের নাক থেকে রক্ত পড়ে বিভিন্ন রোগের কারণে। মাঝেমধ্যে রক্তচাপ বেড়ে গেলে নাক থেকে রক্ত আসার আশঙ্কা থাকে। পুরুষদেরই এই সমস্যায় বেশি ভুগতে দেখা যায়। সর্দির ফলে বারবার নাকে বেশি হাওয়া টানলেও শিরাতে বাতাসের চাপ বেড়ে গিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। অনেকের নখ দিয়ে নাক পরিষ্কারের অভ্যাস থাকে বলেও এমনটা হয়। আবার জোরে হাঁচির সময় নাক চাপলেও শিরায় আঘাত লেগে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
তবে বাহ্যিক আঘাত বা আঙুলের স্পর্শ ছাড়া নাকে রক্ত এসে থাকলে তাতে সতর্ক থাকতে হয়। শিশুদের বেলায় টিউমার, মাথাব্যথা বা মাথার কোনো রোগের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। এ ছাড়া ডেভিয়েটেড ন্যাসাল সেপ্টাম (ডিএএ), জন্মগত সাইনুসাইটিস, পলিপ যেমন অ্যান্ট্রো কোয়ানাল, এথময়ডাল, রাইনেস্পোরিডিওসিস প্রভৃতি রোগেও নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে।
পুকুরে বেশি সময় স্নান করলে নাকে এক ধরনের জীবাণু থেকেও বিপত্তি হতে পারে। এ ছাড়া আছে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়া বা যক্ষ্মা। এ ছাড়া নাকের ভেতর কোনো টিউমার থাকলেও রক্তক্ষরণ হয়। ভিটামিন কে-এর অভাব, লিভারের অসুখ, কিডনির অসুখও রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে।
চিকিৎসা
নাকে আঙুল দিয়ে নাক পরিষ্কার করা বন্ধ করতে হবে। হঠাৎ রক্ত বের হতে থাকলে প্রথমে নাক বন্ধ করে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। তারপর শুয়ে থেকে নাকের পাশে ঠান্ডা পানি বা বরফ দিতে হবে। যদি রক্তচাপ বেশি হয় তবে কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপরও রক্ত পড়া বন্ধ না হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্ত পড়া বন্ধ হলেও পরে এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দেখতে হবে অন্য কোনো জটিলতা আছে কি না। যাদের মাঝে মাঝে নাকের ভেতর থেকে সামান্য রক্ত আসে তাদের অবশ্যই ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
মন্তব্য করুন