তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দেশটিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে জনশক্তি রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হবে। দেশটির শ্রমবাজারের বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ জনশক্তি পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছে সরকার।
শফিকুল আলম বলেন, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করা। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফরের মাধ্যমে দেশটি থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনশক্তি সংগ্রহের চেষ্টা চালানো হবে। এ সংক্রান্ত নানা আলোচনা ও চুক্তি হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের জ্বালানি ও গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণসহ বিভিন্ন খাতে দেশটির বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, এর মাধ্যমে দুই দেশের সুসম্পর্ক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হবে। সেখানে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও তাদের পাসপোর্টের সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে।
অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, অনেক আলোচনাই হবে এবং কিছু বিষয়ে সমঝোতাও হবে। এ ছাড়াও আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা সফরে যাবেন এবং তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। পরবর্তী আপডেট এলে জানানো হবে। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে সহযোগিতার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ জানানো হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও নিরাপদ মনে করবে না। এ বিষয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে একটি বড় সম্মেলন হবে, যেখানে প্রায় ১৭০টি দেশ অংশ নেবে। ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে আমাদের যথেষ্ট মনোযোগ রয়েছে এবং আমরা চাই, তারা নিজেদের বাসস্থানে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জনকূটনীতি) শাহ আসিফ রহমান বলেন, সফরের সময় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, এফবিসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের মধ্যে ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠন, বিএমসিসিআই ও এমআইএমওএসের মধ্যে সহযোগিতা স্মারক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে।
জানা গেছে, ১১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সফরে দুই দেশের সরকারপ্রধান দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। কেবাংসাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন