ইসলামের শিক্ষা শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা ছড়িয়ে আছে প্রতিটি আচরণে, প্রতিটি ব্যবহারে। তেমনই একটি অনন্য অভিবাদন হলো সালাম। এটি ভালোবাসা আর মানবিকতার দুয়ার খুলে দেয়। ‘আসসালামু আলাইকুম’—এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটির মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ, হৃদয়ের প্রশান্তি এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির এক অদ্ভুত শক্তি।
ইসলামী আদবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সালাম সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তি স্থাপন করে। অহংকারকে ঝেড়ে ফেলে বিনয় শেখায়। যাবতীয় মনোমালিন্য দূর করে গড়ে তোলে মানবিক বন্ধন।
হাদিস শরিফে এসেছে, যখন একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম ও মুসাফাহা করেন, তখন আল্লাহতায়ালা তাদের বিদায় নেওয়ার আগেই উভয়ের গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সালামের সর্বোত্তম অনুসরণকারী। ছোট-বড় সবাইকে তিনি নিজে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিতেন। তার এই আমল আমাদের জন্য এক অনন্য আদর্শ।
নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রকৃত ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে? (কাজটি হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’ (তিরমিজি : ২৬৮৮)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। (সুরা নূর : ৬১)।
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। তখন তিনি (নবীজি সা.) বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে একটু বাড়িয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে আরও একটু বেশি বাড়িয়ে বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৬৯০)।
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বেশি বেশি সালাম দিতেন। সালাম প্রদানে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হতো। অধিক ছওয়াব হাসিলে ব্যাপক সালাম প্রদানের জন্য তারা বাজারে যেতেন!
কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে মনে করেন, খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া বা নেওয়া যাবে না। তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ জানান, সালাম দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। যে ব্যক্তি সালাম দেন, তাকে ন্যূনতম ১০টি নেকি দান করা হয়। কিন্তু যারা মনে করেন, খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যাবে না—তাদের এই ধারণা ভুল।
তিনি বলেন, আসলে সালাম যে কোনো স্বাভাবিক অবস্থায় দেওয়া যেতে পারে। খাবার খাওয়াও এমন একটি সময় যেখানে খাদ্যগ্রহণকালে সালাম দেওয়া যেতে পারে, নেওয়াও যেতে পারে।
ইসলামী এই স্কলার বলেন, বোখারি ও মুসলিমে বর্ণনা করা হয়েছে, একবার নবীজি (সা.) খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি মানুষদের সর্দার হিসেবে আবির্ভূত হবো।’ এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নবীজি (সা.) খাবার খেতে বসে কথা বলেছেন। আর সালামও এক ধরনের কথা। তাই খাবার গ্রহণকালে সালাম আদান-প্রদান করা যাবে। কোনো সমস্যা নেই।
মন্তব্য করুন