ঢাকার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ—তারিখ ৩১ জুলাই। সকাল থেকেই বাতাসে ছিল এক অদ্ভুত চাপা উত্তেজনা। চারদিকে সশস্ত্র পুলিশের টহল, তাদের চোখেমুখে কঠোরতা, আর শিক্ষার্থীদের মুখে অনিশ্চয়তার ছায়া। হঠাৎ করেই সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে উঠে দাঁড়ালেন এক তরুণী। পুলিশের গাড়ি এগিয়ে আসছে, একে একে সহপাঠীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আর ঠিক তখনই বুক উঁচিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালেন তিনি। মনে হলো—এই এক শরীর দিয়েই যেন তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন অবিচারের বিরুদ্ধে। তার নাম নুসরাত জাহান টুম্পা।
সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে টুম্পা বলেন—‘আমি জানতাম, তখন আমার দিকে গুলি চালানো হতে পারে, কিংবা গাড়ি শরীরের ওপর দিয়েও উঠতে পারে। কিন্তু আমি পিছিয়ে যাইনি। মনে হচ্ছিল, যদি আমি এক ইঞ্চি পিছাই, তবে অন্যায় জয়ী হবে। আমার মাথায় ঘুরছিল শুধু একটাই কথা—আমার ভাইদের আমি হাজতে দেখতে দেব না। যেভাবেই হোক, এই অবৈধ গ্রেপ্তার আটকাতে হবে।’
হাইকোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার আগেই তার বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর দৃশ্য ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
টুম্পা বলেন, ‘সত্যি বলতে, তখন আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। যারা ভাইরাল হচ্ছিল, তাদের অনেককেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। পরিবারও চেয়েছিল আমাকে গ্রামে পাঠাতে; কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি শেষ পর্যন্ত থাকতে চেয়েছিলাম।
সেদিনের অভিজ্ঞতা টুম্পার জীবন বদলে দেয়। আগে তিনি ছিলেন মাইক্রোবায়োলজির ছাত্রী। গবেষণার প্রতি টানই তাকে সেই বিষয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো তাকে শিখিয়ে দেয়—শুধু গবেষণার টেবিলে বসে থাকলে পরিবর্তন আনা যায় না। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝলাম, চার দেয়ালের ল্যাব আমার জন্য নয়। দেশের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হলে আইন জানতে হবে। তাই আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি।’
মন্তব্য করুন