গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে চট্টগ্রামের অনেক ইস্পাত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের। একই অবস্থা তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোরও। সংকট রয়েছে চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ার। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে কমছে ক্রয়াদেশ। অসন্তোষ-ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা চলছে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের।
জানা যায়, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদার চেয়ে ৪০ শতাংশ গ্যাস কম পাচ্ছে দেশের শীর্ষ ইস্পাত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম। শতভাগ গ্যাস না পাওয়ায় এখন বিকল্প উপায়ে কারখানায় উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘এক মাস ধরে আমরা চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছি না; তাই কারখানায় উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সরবরাহের চেয়ে এখন আমরা ৪০ শতাংশ সরবরাহ কম পাচ্ছি। গ্যাসের এ ঘাটতি পূরণ করতে এখন আমাদের জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় এখন আমাদের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।’
শুধু বিএসআরএম নয়, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এখন চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারখানা মালিকরা বলছেন, এক মাস ধরে কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমেছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিন এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় কিছু কিছু কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইস্পাত এবং তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। বেশিরভাগ ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন ২০-২৫ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে গ্যাসের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পোশাক কারখানাগুলোর আয়রন সেকশনের কার্যক্রম।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরামিকস ছাড়া চট্টগ্রামে নিবন্ধনকৃত কারখানা আছে ৪ হাজার ৯৪৯টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪টি পোশাক কারখানা, বাকি ৩ হাজার ৯২৫টি নন আরএমজি কারখানা। এর মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে চট্টগ্রামে ইস্পাত কারখানা রয়েছে ২৯টি। অন্যদিকে সিমেন্ট কারখানা আছে আটটি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ইস্পাত আর পোশাক কারখানাগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গ্যাস সংকট, ক্রয়াদেশ কমার কারণে এখন কারখানাগুলো এমনিতে কঠিন সময় পার করছে। এসব সমস্যার সঙ্গে বাড়তি এ বেতন যোগ হলে কারখানায় উৎপাদন চালু রাখা কঠিন হবে।
এর আগে ইয়ংওয়ানের উদাহরণ দিয়ে সব শ্রমিকের বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে বাড়ানোর দাবিতে চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্রথমে বিক্ষোভ করে প্যাসিফিক জিন্সের এনএসটি ফ্যাশনের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবির মুখে মালিকপক্ষ মেনে নেয়। পরদিন এইচকেডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আরএসবি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জেজে মিলস, মেরিম কো. লিমিটেড, এমজেডএম লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ায় অন্য কারখানাগুলোর শ্রমিকরাও একই হারে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, গত কয়েক দিনে ইপিজেডে অন্তত ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা একই হারে বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। আমরা শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অধিকাংশ কারখানা মালিক শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছেন।