ঢাকাই সিনেমার অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে তার রয়েছে নিজস্ব দর্শন। ঢালিউডের প্রতি তার যেমন রয়েছে ভালোবাসা তেমনি সিনেমাসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে আছে অভিযোগ ও ক্ষোভ। সম্প্রতি কালবেলার ক্যামেরার সামনে নতুন তারকাদের কিছু কাজকর্মের সমালোচনা করেছেন এ অভিনেতা। তার সঙ্গে আলাপে ছিলেন আহসান হাবীব।
সিনেমা রিলিজ হওয়ার আগেই নায়ক কিংবা নায়িকা তকমা নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াচ্ছেন নবাগত অভিনয়শিল্পীদের কেউ কেউ। তাদের বিষয়ে ডিপজল বলেন, ‘মিডিয়া ওই নতুন শিল্পীকে সাক্ষাৎকারে ডাকলে সে যেতেই পারেন, তবে যাওয়া উচিত তার ডিরেক্টর বা প্রডিউসারকে নিয়ে। তাদের মাধ্যমে ওই নবাগতের পরিচয় বাড়বে। কিন্তু কেউ যদি একা-একা সাক্ষাৎকার দেয় এবং নিজেকে জাহির করে তাতে ভালো কিছু হবে না। ভবিষ্যতে ভালো কিছু আশাও করতে পারবে না।’
অনেক সময় সিনেমা হলে দর্শক মেলে না। কিন্তু শো শেষে তারকাদের সঙ্গে সেলফি তুলতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এ বিষয়ে অভিনেতা ডিপজল বলেন, ‘যারা আর্টিস্ট হতে চায় কিংবা আর্টিস্ট হওয়ার মানসিকতা রাখে, তাদের পাবলিকের সামনে যাওয়া ঠিক নয়। গেলেও সে ভালো কিছু পাবে বলে মনে হয় না। আর্টিস্টকে যত লুকিয়ে রাখা যায়, ততই তার সম্মান বাড়ে।’
নতুন তারকা আসছে না। এলেও অল্প কয়েক দিন পর তাদের ভেতর দম্ভ ভর করছে, এমন অভিযোগ তুলে ডিপজল বলেন, ‘তারা আগেই অনেক বড় হয়ে যায়, অনেক বড় বড় কথা বলে ফেলে। কিন্তু বড় কথা বললেই তো হবে না, কাজটাও তো শিখতে হবে। কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপন করলেই কি বড় হওয়া যায়? আমরাই তো এখনো কিছু শিখিনি। কেউ যদি মনে করে যে সে কাজ শিখে গেছে, তাহলে সে জিরো। তার উঠে আসতে অনেক সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন এমন একটা সময় এসেছে যখন কারও একটুও ধৈর্য নেই। এখন সবাই ছুটছে টাকার পেছনে। তিনটি সিনেমা করার পর সেগুলো রিলিজ না হতেই আরও একটা ছবি করতে চায়। কিন্তু আগে তিনটা চলচ্চিত্র রিলিজ হোক; সেগুলার কী অবস্থা হয় সেটা আগে দেখতে হবে। ছবি ভালো হলে টোমেটিকভাবেই দশজন তাকে টেনে নেবে। তারকা তৈরি একটা কঠিন ব্যাপার। এখন ছেলেমেয়েরা ধৈর্য ধরতে চায় না।’
পুরোনো তারকারা কাজ পাচ্ছেন না—এ বিষয়ে দ্বিমত জানিয়ে ডিপজল বলেন, ‘যারা কাজের মানুষ তারা ঠিকই কাছ পাচ্ছেন। তবে অনেক তারকা আছেন যারা পরিবেশগত কারণে কাজ করতে পারেন না। যেমন আলমগীর ভাই। তাকে যদি ডাকা হয় তিনি হয়তো গরমে কাজ করতে পারবেন না। পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে তাই পুরোনো আর্টিস্টদের ফেলে দেওয়া যাবে না।’
তারকাদের শোরুম উদ্বোধন তথা ফিতা কাটার প্রবণতার বিষয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘শোরুম বা অন্য কিছু উদ্বোধনে আর্টিস্ট যেতেই পারেন। যাবেন না কেন? যাকে-তাকে তো নিচ্ছে না। বাংলাদেশে অনেক সুন্দরী আছেন, তাদের তো নিচ্ছে না। তারকাদের নেওয়া হচ্ছে। কারণ তাদের সবাই চেনে। ফিতা কাটাকে খারাপ কিছু মনে হয় না।’
পরিবার নিয়ে মাঝমধ্যেই ঘুরতে দেখা যায় অভিনেতা ডিপজলকে। এ বিষয়ে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাই। বিদেশে গেলেও আমরা সিনেমা দেখি। বাংলাদেশের সিনেমা হলেও আমার ছেলেমেয়েরা যায়, সিনেমা দেখে। ছবির গল্প ভালো লাগলে কে না দেখবে! একটা সিনেমায় শেখার মতো অনেক কিছু থাকে। হিন্দি সিনেমায় শেখার কিছু এখন আর নেই। এখন যত বাজে জিনিস আছে, সব হিন্দি সিনেমায় আছে। যেটাকে বাংলায় নোংরামি বলে।’