কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই একের পর এক বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজের সুযোগ এসেছিল তার কাছে। সোহানুর রহমান সোহানের আলোড়ন সৃষ্টি করা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায়ও নায়িকা হিসেবে মুক্তিকে চেয়েছিলেন পরিচালক। তবে মুক্তির পরিবার চায়নি সে সময় মেয়ে অভিনয়ে আসুক। কিংবা চলচ্চিত্রে নিয়মিত হোক। এমন একটি দর্শকপ্রিয় সিনেমায় কাজের সুযোগ পেয়েও না করতে পারা নিয়ে আক্ষেপ হয়েছিল কি না— প্রশ্ন করা হয় এ অভিনেত্রীকে। জবাবে মুক্তি কালবেলাকে বলেন, “আসলে ওই সময়টায় আমার তেমন কিছু মনে হয়নি। বয়সটাও কম ছিল। সোহান মামা (প্রয়াত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান) ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণের আগে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আমাকে তিনি পাঁচটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। বাবা বলেছিলেন, আমার মেয়ে কেন এভাবে একটি প্রোডাকশনের ব্যানারে বছরজুড়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।”
ক্যারিয়ারে সালমান শাহর সঙ্গে কাজ করতে না পারা নিয়ে কোনো খারাপ লাগা আছে কি না? জবাবে ‘চাঁদের আলো’খ্যাত নায়িকা বলেন, “সালমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিবারের অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। আম্মাকে খুব সম্মান করতেন। ‘অন্তরে অন্তরে’ সিনেমায় মা সালমান ভাইয়ের দাদির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তখন আমাদের দেখা হয়। তিনি মারা যাওয়ার পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এত জনপ্রিয় নায়কের এভাবে চলে যাওয়া আমাকে কষ্ট দিয়েছিল। এখন মনে হয় সালমান শাহর সঙ্গে হয়তো কোনো সিনেমা করলে ভালো হতো। তিনি দারুণ একজন অভিনেতা ছিলেন।”
মুক্তির চলচ্চিত্রের শুরুটা হয়েছিল গৌতম ঘোষের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমার মাধ্যমে। সেখানে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমায় চম্পার মেয়ে গোপী চরিত্রে তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে। অন্যদিকে ওমর সানীর নায়িকা হিসেবে ‘চাঁদের আলো’তে দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেন তিনি। সিনেমায় ‘তুমি আমার চাঁদ, আমি চাঁদেরই আলো’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ কিংবা চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাসন রাজা’ সিনেমায় তার অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ মেলে। এর পরও সিনেমায় দেখা গেছে মুক্তিকে। তবে সেটি নিয়মিত না। হাল সময়ে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা মিলছে তার। এবার কি অভিনয়ে নিয়মিত হবেন মুক্তি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন, ‘আমি কিন্তু কখনোই অভিনয়ে নিয়মিত ছিলাম না। আমার কাজের সংখ্যাটাও কম। অনেক কাজ করতে হবে এমন কোনো ইচ্ছা ছিল না। তবে সামনে হয়তো আমাকে কয়েকটি সিনেমায় দেখবেন দর্শক। একটি সিনেমার শুটিং করার কথা ছিল। এখন সেই সিনেমার শুটিং চলছে। কিন্তু আমি শিডিউল মেলাতে পারিনি। ইচ্ছা আছে ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে কাজ করার। কারণ এখনো দর্শকদের সঙ্গে দেখা হলে অনেকেই বলেন, আপনার ওই সিনেমাটা খুব ভালো ছিল। কেউ কেউ আমার সিনেমায় চরিত্রটিও দেখি মনে রেখেছেন। এটি দেখে মনে হয় আসলে আরও বেশি কাজ করা উচিত ছিল। দর্শকের এ ভালোবাসার কোনো মূল্য হয় না। তাদের এ ভালোবাসা প্রতিদান দিতে পারব না।’