ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের নতুন গ্রন্থ Geopolitics and Strategic Shifts in South Asian/Subcontinental Countries-এর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৩ জুন) নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এম সাখাওয়াত হোসেনে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক, গবেষক, ছাত্রছাত্রী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। পুরো আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ তৌফিক এম হক। তিনি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এসআইপিজির কেবল জ্ঞান উৎপাদন করে না, বরং নীতিনির্ধারণেও কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। আমাদের শিক্ষক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং সম্প্রতি গঠিত সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
বইটিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তার পূর্ববর্তী গবেষণা ও প্রকাশনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে এসআইপিজির প্রকাশনার অংশ হিসেবে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত Electoral Governance in Bangladesh।
আলোচনায় তিনি বলেন, আমি পিএইচডি শেষ করে এসআইপিজি-এ যোগদানের সময় আমার শিক্ষক প্রফেসর সালাহউদ্দিন আমিনুজ্জামান এই গবেষণা শুরু করার পরামর্শ দেন। এই বইটি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি বোঝার জন্য একটি দিকনির্দেশনা। আমি প্রথম অধ্যায়েই বলেছি—যে সমুদ্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে-ই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। আজকের বিশ্বে পূর্ব-পশ্চিমের সংঘাত ইউরেশিয়ান হার্টল্যান্ডে কেন্দ্রীভূত। মোগলরা সমুদ্রের গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় এবং শক্তিশালী নৌবাহিনী না থাকায় পরাজিত হয়েছিল। আমার বইয়ে ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ এবং পাকিস্তান-ভারতের ভূরাজনৈতিক উত্তরণ কীভাবে আঞ্চলিক রাজনীতিকে চিরতরে পাল্টে দিয়েছে, সেটিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জনাব এম. এ. কাশেম, এসআইপিজি-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ তৌফিক এম হক, এবং বইটির লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান বইটির প্রাসঙ্গিকতা ও বিশ্লেষণধর্মী লেখনীকে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমি ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনকে এই সময়োপযোগী বইয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। যদিও বিষয়বস্তু গভীর, বইটি অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপিত। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা প্রতিযোগিতাপূর্ণ; চীনের BRI-এর মতো উদ্যোগ প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রভাব ফেলছে। প্রশান্ত মহাসাগরে যে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তা ভারত মহাসাগরেও ছড়িয়ে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপট আমি আগে কোনো বাংলাদেশি বইয়ে পাইনি।
ড. রেমন্ড লাউ বইটির তথ্যবহুল ও গবেষণাধর্মী দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, এই বইটি দক্ষিণ এশিয়া ও আঞ্চলিক রাজনীতির ওপর একটি তথ্যের ভাণ্ডার। বিষয়বস্তু অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে আমার মতে, চীনের বর্তমান আঞ্চলিক ভূমিকা নিয়ে আরও বিশদ আলোচনা ভবিষ্যতে যুক্ত করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এম. এ. কাশেম বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং NSU-এর একাডেমিক উৎকর্ষ ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। শেষে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণাভিত্তিক সংলাপের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই অনুষ্ঠান এসআইপিজি এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়। নীতি ও প্রশাসনবিষয়ক গবেষণায় এসআইপিজি দেশের অন্যতম অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর্মসূচি, গবেষণা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৌশলগত ও একাডেমিক জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
মন্তব্য করুন