কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

একীভূত হতে এবার আপত্তি ন্যাশনাল ব্যাংকের

ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ছবি : সংগৃহীত
ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে এবার বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকে হোচট খেলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। শনিবার (২৭ এপ্রিল) ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একিভূতকরণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকার পরিচালিত বেসিক ও বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাবের (রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) রেশ না কাটতেই এবার ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হতে সরাসরি অস্বীকার করেছে ন্যাশনাল্য ব্যাংক। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে একীভূত না হওয়ার জন্য খেলাপি ঋণ আদায়ে বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকটি একটা সময় একীভূত না হয়ে বরং অন্য ব্যাংকে একীভূত করার সক্ষমতা অর্জন করবে এমন বিশদ পরিকল্পনা নেওয়া হয় বলে সভাসূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক একটি সুসংগঠিত ব্যাংক। একটি বিশেষ পরিবারের আধিপত্যের কারণে কিছু শাখা বড় ঋণ আদায় হচ্ছিল না। আর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সেই পরিবারের সর্বেসর্বা ক্ষমতায় বিরুদ্ধোবস্থান নিতে পারেনি। যেহেতু সাধারণ গ্রাহকের টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়ার পরে দায়িত্ব নিয়েছি। এখন তো ওই পরিবারে কর্তৃত্ব নেই। জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। ব্যাংকের প্রায় ৩০০ শাখা-উপশাখার মধ্যে মাত্র হাতেগোনা ১১-১২টি শাখা ছাড়া সবগুলো মুনাফা করছে। এখন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে খেলাপি আদায় বেড়ে গেছে। সামনে লক্ষ্য বেধে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় খুব শিগগির খেলাপি সন্তোষজনক পর্যায়ে নেমে আসবে। একটা পর্যায়ে একীভূত না হয়ে অন্য ব্যাংকে একীভূত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগে থেকে কোনো ধরনের আলোচনা না করে হঠাৎ গত ৯ এপ্রিল ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। তবে চাপিয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হয়নি।

জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর এক আদেশে প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছ বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান মেঘনা ব্যাংকের সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যাংক একীভূত করার গড়িমসি করছে। এটা প্রাকটিকাল ইস্যু। আমানতকারী, স্টেকহোল্ডার, ব্যাংকার ও পরিচালকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এটা দূর করতে হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পরিচালক জানান, ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে সিকদার পরিবারের বিতর্কিত পরিচালকদের সরিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। এখন হঠাৎ করে আরেক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে বলা হয় তাহলে তো কিছুই হবে না। বরং এই ব্যাংকের যে সম্পদ রয়েছে অনেক ব্যাংকের চেয়ে ভালো। সুতরাং খেলাপি ঋণ কমানো গেলে এবং আস্থা ফেরানো গেলে ব্যাংকটি দ্রুত সবল ব্যাংক হিসাবে ঘুরে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, একীভূতরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গত ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডেকে জানায় আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা একীভূত হওয়ার বিষয়ে এমওইউ সই করেছে। এছাড়া সিটির সঙ্গে বেসিক, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল, সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত করা হবে। যদিও এর আগে গভর্নর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ৮ থেকে ১০টি ব্যাংক একীভূত করা হবে। এমন একীভূত প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং সবশেষ ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হতে অনীহা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো ব্যাংক স্বেচ্ছায় না হলে জোর করে একীভূত করার ইখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে। তবে সেটা এখন করা হচ্ছে না। ন্যাশনালসহ ১০টি ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এরমধ্যে কোন ব্যাংক ভালো হলে একীভূত হবে না। এমনকি যদি সব ব্যাংক ভালো হয় তবে কোন ব্যাংক একীভূত নাও হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জানা গেল সেই তিন জনপ্রতিনিধির এসএসসির ফল

সুরা আর রহমান বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

দেদার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ও ক্ষমার অযোগ্য : জি এম কাদের 

বাংলাদেশেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন উইলিয়ামস

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা

মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও ৩৭ প্রতিষ্ঠান

পঞ্চম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট সম্পন্ন করল বুটেক্স বিজনেস ক্লাব

কুমিল্লা বোর্ডে গণিত ও ইংরেজিতে বেশি ফেল

টানা দ্বিতীয়বার ভাণ্ডারিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল

চোটে পড়া তাসকিনকে বিশ্বকাপে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

১০

সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

১১

রাশিয়ার ভয়ংকর প্রযুক্তি গিলে নিচ্ছে বিমানের সিগন্যাল

১২

সুরা কদরের বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

১৩

সার্বজনীন পেনশন‌ বাতিলের দাবিতে খুবি শিক্ষকদের মানববন্ধন

১৪

মা দিবসে এসি মিলানের অনন্য উদ্যোগ

১৫

বাসে যবিপ্রবি ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৬

আড়াই বছরের সাজা থেকে বাঁচতে ১৬ বছর পলাতক

১৭

এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা

১৮

এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়ল

১৯

‘সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে মলিন করে দিচ্ছে’

২০
X