ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ব্যারাকে ধর্ষণের শিকার সেই নারী কনস্টেবল আদালতকে বলেছেন, ‘আমি আর ঝামেলা চাই না, বিয়ে করে সংসার করতে চাই। মান-সম্মান যেহেতু গেছে। সতীনের সংসার করতে হলে করব।’
অন্যদিকে বিয়ের বিষয়ে মামলার আসামি পুলিশের আরেক কনস্টেবল সাফিউর রহমান আদালতকে বলেছেন, ‘চাপে আছি।’
রোববার (২৪ আগস্ট) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে সাফিউরের ৫ দিনের রিমান্ড শুনানি ছিল। শুনানিকালে সাফিউরকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার বাদী সেই নারী কনস্টেবলও আদালতে উপস্থিত হন।
সাফিউরের আইনজীবী আব্দুস ছালাম সিকদার জানান, গ্রামের একটা প্রবাদ আছে, মিয়া বিবি তো রাজি। উভয়ে বিয়েতে সম্মত। ১৫ লাখ টাকা দেহমোহরে বাদী বিয়েতে রাজি হয়েছেন। এখানেই তাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি, যদি অনুমতি দেন। পরে কাগজ উপস্থাপন করব।’
তখন আগে থেকেই আসামিপক্ষের আইনজীবী থেকে আদালতে হাজির করা কাজী সিরাজুল ইসলামকে দেখানো হয়। এজলাসের পেছনের বেঞ্চে বসে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করছিলেন কাজী।
তখন বিচারক বলেন, এটা সেনসিটিভ বিষয়। তখন আসামির আইনজীবী বলেন, তারা অ্যাডাল্ট। বাদীর ২১, আর আসামির ২৮ বছর বয়স। তখন বিচারক বলেন, এটা আপনাদের বিষয়, আমার বা আদালতের বিষয় না। আদালতের বাইরে করতে পারেন। কোর্টের কনসার্ন নেই। আপনাদের ওপর ডিপেন্ড করছে। তখন আইনজীবী বলেন, ‘বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আদালতকে অবহিত করব।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস ছালাম সিকদার আদালতকে বলেন, ‘বিয়ে করে ৫/৭ দিনের মধ্যে কাবিননামা দাখিল করব। প্রয়োজনে আজই দিতে পারব। আসামিকে জামিন দিন।’
এসময় বাদীপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের জামিনের বিরোধিতা নেই।’
সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই নারী কনস্টেবল আদালতকে বলেন, ‘আমি আর কোনো ঝামেলা চাই না। বিয়ে করতে না চাওয়ায় মামলাটা করেছি। রিমান্ড চাচ্ছি না। বিয়ে করে সংসার করতে চাই।’
বিচারক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাফিউর রহমানের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। প্রেশারে আছি, এখন এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।’
দ্বিতীয় বিয়ের আগে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে না? বিচারকের এমন প্রশ্নে আসামির আইনজীবী বলেন, ‘অনুমতি লাগে, যদি সে ক্লেইম করে। কিন্তু সে তো ক্লেইম করেনি।’
শুনানি শেষে আদালত সাফিউরের রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিয়ের পর ফের জামিনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানান আইনজীবীরা
এর আগে গত ২২ আগস্ট ধর্ষণের অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন ওই নারী কনস্টেবল। মামলা পর ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন্স থেকে সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই থানার এসআই জুলফিকার আলী তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হননি। এজন্য সাফিউরকে কারাগারে পাঠিয়ে রিমান্ড শুনানির দিন রোববার দিন ধার্য করা হয়।
মামলায় অভিযোগ থেকে জানা যায়, সাফিউর রহমান গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশের নারী ব্যারাকে ভিকটিমের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে ধর্ষণ করে। ইতিপূর্বে বিগত ৫ মাসে সপ্তাহে দুইবার করে ধর্ষণ করে এবং তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও চিত্র তার ব্যবহৃত আইফোনে ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করেন।
মন্তব্য করুন