নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কৃষকরা পাটের আঁশ ছাড়াতে ও শুকানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। পরে বৃষ্টি হওয়ায় নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পাট কেটে তা নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দিয়ে রেখেছেন। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে নারী-পুরুষ মিলে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ ছাড়ানো আঁশ পানিতে পরিষ্কার করে বাঁশের আড় টানিয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। পাটশোলা ছোট ছোট আঁটি বেঁধে সারি সারি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন শুকাতে। কেউ কেউ শুকনো পাট বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে পাটচাষি কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাটের দাম প্রতি মণ তিন হাজার থেকে ৩ হাজার পাঁচ শত টাকা। কেন্দুয়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া বলেন, মান অনুযায়ী পাটের দাম দেশি (সোতা) ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, কেনাফ, মেস্তা, তুষা ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে ন্যায্যমূল্য পেয়ে পাটচাষিদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর পাটের আবাদও হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে। আর প্রণোদনা হিসেবে ১০০ জন কৃষকের মধ্যে প্রতিজনকে ২ কেজি করে পাট বীজ ও ১০ কেজি করে এমওপি ও ডিএপি সার বিতরণ করা হয়। তাছাড়া পাট মন্ত্রণালয় উপজেলায় ২৫০ জন কৃষকের মধ্যে প্রত্যেককে ২ কেজি করে পাট বীজ সহায়তা করেছে।
কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের কৃষক সুলতান মাহমুদ বলেন, তিন কাঠা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম পাটও ভালো হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না।
আরেক কৃষক ফজলুল হক বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তবে পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, এ উপজেলায় সোনালী আঁশ পাটের চাহিদা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তোষা ও দেশি জাতের পাটের আবাদই বেশি করেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা যাতে সব জাতের পাট আবাদে আগ্রহী হয় ও যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে সেজন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদনে প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি আমরা। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের নিয়মিত তথ্য দিয়ে আসছেন কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন