দেলোয়ার হোসেন, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহে লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহে হঠাৎ করেই বেড়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। শহর এলাকায় তুলনামূলক বিদ্যুৎ ভালো পাওয়া গেলেও গ্রামে রাত নামলেই শুরু হয় ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকেনা বিদ্যুৎ। ফলে গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, একদিকে উৎপাদন কম, অন্যদিকে চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে লোডশেডিং।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে মুক্তাগাছা উপজেলার চক নারায়ণপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মোমবাতি জ্বালিয়ে বেচাকেনা করছেন সুলান্ত চন্দ্র দাশ। মৃদু আলোতেই বসেছে আড্ডা। গ্রামের সাধারণ মানুষের এমন চিত্র দেখা যায়।

রাস্তায় থাকা ঊসা রানী দাশ বলেন, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গরমে অস্থির সন্তানকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে গরমে জন্য থাকা যায় না পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন। এই গ্রাহকের প্রশ্ন ভোগান্তি কবে কমবে?

উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের নতুনবাজার এলাকায় একটি মুরগির খামার রয়েছে ছদরুল ইসলামের। অন্তত সাত বছর ধরে এ খামারটি পরিচালনা করেন তিনি। তার খামারে বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে তার মুরগি মারা যায় জানিয়ে ছদরুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে মুরগি অস্থির হয়ে যায়, অনেক সময় মারাও যায়। সে কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।

শুধু ছদরুল ইসলাম নন গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক ও সাধারণ মানুষ জেলাজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। শহর এলাকায় লোডশেডিং কম থাকলেও গ্রামে তীব্র আকার ধারণ করছে।

সদর উপজেলার চরঈশ্বরদীয়া ইউনিয়নের চরলীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের দুটি সেচ পাম্প রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে পাম্প গুলো দিয়ে অন্তত ১৭০ কাঠা আমন ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কয়েকদিন ধরে গরম বেড়েছে। আগে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি আছে। এখন পুরোপুরি সেচ লাগে না। যতটুকু বিদ্যুৎ পাওয়া যায় তা দিয়ে চলছে। কিন্তু রোদ বাড়লে ও বৃষ্টি না হলে এবং লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে সেচ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ মুক্তাগাছা কার্যালয় থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহ সদরের কিছু অংশ, ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা উপজেলা এবং টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল, মধুপুর, ভূয়াপুর, ধনবাড়ি ও গোপালপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তাদের গ্রাহক রয়েছে অন্তত ৬ লাখ ২০ হাজার।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জেনারেল ম্যানেজার মো. শহীদ উদ্দিন জানান, চাহিদার ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়। ফলে লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর শম্ভুগঞ্জ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, তারা জেলার ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, ফুলপুর, তারাকান্দা, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও সদর উপজেলার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এসব এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক রয়েছেন সাড়ে চার লাখ। এই গ্রাককেরা চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমন অবস্থা শুরু হয়েছে গত আট-নয়দিন ধরে। লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। লোডশেডিং এর কারণে মানুষ ফোন করে গালাগালি করে, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। কারণ আমরা সরবরাহ পাচ্ছি না। দিনের আমাদের চাহিদার ৩০ শতাংশ লোডশেডিং এবং রাতের বেলায় ৫০ শতাংশের মতো লোডশেডিং রাখতে হয়। তাই আমাদের অর্ধেক এলাকা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দুটি সংস্থার আওতায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় গ্রাহক আছেন গ্রাহক অন্তত ৫০ লাখ। এর মধ্যে পিডিবির গ্রাহক প্রায় ১৩ লাখ। বাকি ৩৭ লাখ পল্লী বিদ্যুতের।

এসব গ্রাহকের জন্য পিক আওয়ারে চাহিদা ১ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট, অফ-পিকে ১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। বিপরীতে স্বাভাবিক সময়ে পিক আওয়ারে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ ও অফ-পিকে ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। যদিও শীত-গ্রীষ্ম ভেদে চাহিদা ওঠানামা করে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল হক বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। ফলে জাতীয় গ্রীডের উপর নির্ভর করতে হয়। সঞ্চালন লাইন দিয়ে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আনা সম্ভব না। স্থানীয় উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন না বাড়লে পরিস্থিতি উন্নতি সম্ভব নয়।

পিডিবির ময়মনসিংহের প্রধান প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং এর পরিমাণ বেড়েছে। একদিকে কমিয়ে অন্যদিকে বিদ্যুৎ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। গত ১০ আগস্ট মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া শংকট তৈরি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তবে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজশাহীর চারঘাটে বন্যাদুর্গতদের পাশে বিএনপি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন রোধে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে : নীরব

মৃত বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ভিডিও নিয়ে জানা গেল সত্য ঘটনা

চিকিৎসা সামগ্রী রেজিস্ট্রেশনে স্বতন্ত্র নীতিমালার দাবি

রাতে জামিনে কারামুক্ত হলেন শমী কায়সার

ঢাকায় ‘কমনওয়েলথ অ্যালামনাই প্রদর্শনী ও নেটওয়ার্কিং সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত

‘ভোলাগঞ্জ থেকে লুট করা’ পাথর ডেমরায় উদ্ধার

আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হল ঢাবি-সাত কলেজ

রাতে স্মার্টফোনের আসক্তি সহজেই দূর করুন

গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ : আমিনুল

১০

বাড়ির মালিককে থাপ্পড় দিয়ে ডাকাত — ‘ঘরে সিসি ক্যামেরা কেন লাগিয়েছিস’

১১

হাঁসের মাংস থেকে দূরে থাকবেন যারা

১২

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে যুবকের ভিডিও কল, আ.লীগ সন্দেহে গণপিটুনি

১৩

আগস্টের প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার 

১৪

জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা : চট্টগ্রামে যেসব সড়কে চলতে মানা

১৫

টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনীতি ও সংহতির সমন্বয়ের আহ্বান কফিলউদ্দিনের

১৬

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

১৭

জাহাঙ্গীরনগরে নতুন মোড়কে ফিরছে ‘পোষ্য কোটা’

১৮

‘যারা স্বাধীন দেশ চায়নি, তাদের এখন বড় গলা’

১৯

পাথর লুটের পর ঘুম ভাঙল সবার, এখন পর্যন্ত উদ্ধার কত

২০
X