

নওগাঁর বদলগাছীতে ঘুষের টাকা লেনদেনে রফাদফার বক্তব্য নেওয়ায় সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই সাংবাদিক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানায় একটি সাধারণ ডয়েরি (জিডি) করেছেন।
অভিযুক্ত নেতার নাম আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক। তিনি বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এবং আধাইপুর ইউনিয়নের চকবনমালি গ্রামের বাসিন্দা। আর লাঞ্চিত হওয়া ওই সাংবাদিকের নাম মিঠু হাসান। তিনি দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকার বদলগাছী উপজেলা প্রতিনিধি।
এ বিষয়ে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার ওসি শাহ জাহান আলী কালবেলাকে বলেন, আমি শুনেছি সাংবাদিক মিঠুকে তুলে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনাটির একটা সমাধান হয়ে গেছে। তবে বিষয়টি আমি নিশ্চিত না।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সাংবাদিক মিঠুর সঙ্গে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলের দিকে বদলগাছী সরকারি কলেজ গেটের সামনে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে। তবে স্থানীয় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মী থাকায় সেই যাত্রায় রক্ষা পায় ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক।
জানা যায়, তিন বছর আগে উপজেলার সদরের ঠাকুরপাড়া এলাকার পলাশ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান সেতুর কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা নেয়। এরপরই পলাশ আত্মগোপনে চলে যায়। পরে আসাদুজ্জামানের আর চাকরি হয়নি। এক পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক দফায় ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ফেরত পান। বাকি ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিতে তালবাহানা করতে থাকে পলাশ। এরপর হঠাৎ গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আসাদুজ্জামান জানতে পারে পলাশ নিজ বাসা ঠাকুরপাড়াতে অবস্থান করছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে মহিলা কলেজ গেট সংলগ্ন মুদি দোকানে পলাশকে নিয়ে আসাদুজ্জামান ও তার স্বজনরা মিটিংয়ে বসেন। সেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক উপস্থিত ছিলেন। ঠিক তখনই টাকা দেওয়া নিয়ে হট্টগোল বাঁধে। এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিক মিঠু হাসান সংবাদ প্রকাশে তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার কাছে কাছে মোবাইল ফোনে বক্তব্য চায়। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান তিনি। এরপর ওই সাংবাদিককে দেখা করতে বলে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাকে তুলে নিলে যেতে চাইলে স্থানীয় অন্যান্য সহকর্মী সাংবাদিক ও জনতা বাঁধা দেয়।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মিঠু হাসান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ যদি তুলে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে কীভাবে সাংবাদিকতা করবো। আমার সহকর্মী ও স্থানীয়রা সেদিন না থাকলে সে তুলে নিয়ে গিয়ে হয়তো বড় ধরনের ক্ষতি করতো। আমি সেদিনের পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ও আতঙ্কে আছি। এই জন্য থানায় জিডি করেছি।
বিষয়টি নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিকের কাছে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হয়নি।
জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল কালবেলাকে বলেন, হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যদি চাঁদাবাজি ও দলবাজিসহ অন্যায় অনিয়ম করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বা হচ্ছে। আর সাংবাদিকের সঙ্গে কোনোভাবেই অশোভন আচরণ করা যাবে না। আমি দলের একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে বিষয়টি দলীয় ফোরামে জানাবো।
মন্তব্য করুন