মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মেহেরপুরে শিশু-নারীসহ ১৮ জনকে জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা তুলে নেওয়া স্বজনদের অপেক্ষায় পরিবার। ছবি : কালবেলা
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা তুলে নেওয়া স্বজনদের অপেক্ষায় পরিবার। ছবি : কালবেলা

মেহেরপুর শহরের শিশু বাগান পাড়া থেকে তিন পরিবারের শিশু ও নারীসহ ১৮ জনকে জঙ্গি সন্দেহে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে একজন নিরুদ্দেশ। তবে ৫ শিশুকে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

২ আগস্ট রাতে শহরের শিশু বাগানপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলী মিস্ত্রির ছেলে স্ট্রিট ফুড বিক্রেতা আনোয়ার হোসেনকে (৩০) তার বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।

তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন শিশু বাগানপাড়ার কিতাব আলীর ছেলে সেন্টু হোসেন (২৮), তার স্ত্রী দিলরুবা খাতুন (২৫), ছেলে লাসিন ও হুজাইফা, একই পাড়ার রিকসা চালক পলাশ (৫৫), তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৪৮), মেয়ে ফারহানা, প্রিয়া খাতুন, জামাতা ঝন্টু মিয়া, ছেলে ফরহাদ হোসেন, ফয়সাল হোসেন, নাতি বুখারি হোসেন, পলাশের আরেক ছেলে মিনারুল ইসলাম, নাতনি মিতা খাতুন, রিতা খাতুন ও মিনারুল ইসলামের স্ত্রী শাহিনুর।

এদিকে ঘটনার পর থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন একই পাড়ার মাংস বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের ছেলে রকিব মোল্লা ওরফে মুজাহিদ (৩০)।

এদের মধ্যে বুখারি, ফয়সাল, মিতা, লাসিন ও হুজাইফা শিশু হওয়ায় ৮ আগস্ট মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মাধ্যমে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আটককৃতদের এক প্রতিবেশী বলেন, আটকরা সবাই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পুলিশের কাছে এই তালিকায় ১৮ জনের নাম আছে বলেও জানান তিনি।

আনোয়ার হোসেনের মা আনোয়ারা খাতুন ও বাবা ইদ্রিস আলী মিস্ত্রি বলেন, ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের দুজনের পরনে পুলিশের পোশাক এবং অন্যরা সাদা পোশাকে ছিল।

আনোয়ারের স্ত্রী পলি খাতুন বলেন, তারা বলেছিলেন দু-একটা কথা জিজ্ঞাসা করে এখনি ছেড়ে দিয়ে যাবেন। সেই যে নিয়ে গেলো তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি।

তারা জানান, আনোয়ারকে নিয়ে যাওয়ার কয়েকবার মেহেরপুর থানা, র‌্যাব অফিসে গিয়েছি। কোনো খোঁজ পাইনি। সেখানে না পেয়ে জেলার অন্যান্য উপজেলার পুলিশ স্টেশন, র‌্যাব ও ডিবি অফিসে সন্ধান করা হয়েছে। কিন্তু সেসব জায়গায়ও আনোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি। থানায় জিডি দিতে গেলেও থানা পুলিশ জিডি নেননি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, আটককৃতরা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সক্রিয় সদস্য। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকা থেকে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের একটি গ্রুপ মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহযোগীতায় তাদের আটক করে ঢাকায় নিয়ে গেছে। আটককৃত ৬ শিশুর মধ্যে ৫ জন শিশুকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিকট ফেরত দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে সেন্টু হোসেন ও আনোয়ারের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাই বারান্দায় বসে আছেন। তাদের সান্ত্বনা দিতে প্রতিবেশী কয়েকজনও সেখানে আছেন। এছাড়া পলাশ ও রাকিব মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তাদের বাড়িতে তালা মারা দেখা গেছে। পলাশের ফেরতদ দেওয়া ছেলে ফয়সাল ও ফরহাদের ছেলে বুখারীকে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় গেছে তা বলতে পারেনি প্রতিবেশীরা।

সেন্টু হোসেনের দুই ছেলে লাসিন ও হুজাইফাকে ফেরত পেয়েছেন তার দাদী আদরী খাতুন। এর মধ্যে হুজাইফার একটি পা ভেঙ্গে গেছে।

বোন পাপিয়া খাতুন বলেন, আমার ভাইকে ধরে নিয়ে কোথায় রেখেছে সেটাতো আমরা জানার অধিকার রাখি। তারা অন্যায় করলে সাজা হোক। কিন্তু আমাদের পরিবারকে খোঁজ দিক।

আনোয়ার হোসেনের মা আনোয়ারা খাতুন জানান, রাত ১টার পরপরই দুজন পুলিশের পোশাক পরে, চারজন সাদা পোশাকে প্রাচীর টপকে বাড়িতে প্রবেশ করে। আইনের লোক পরিচয়ে ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে। সকালে থানায়, ডিবি কার্যালয়, র‌্যাব ক্যাম্পে গেলে কেউ স্বীকার করেনি ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার কথা।

আনোয়ারের স্ত্রী পলি খাতুন বলেন, স্বামীর সন্ধানে অনেক জায়গায় গিয়েছি কোথাও সন্ধান মিলল না। আমার স্বামী নিরপরাধ। তাকে কেন রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হলো তা বুঝতে পারছি না।

প্রতিবেশী জাহিদ হোসেন বলেন, আনোয়ার ফুটপাতে ব্যবসা করতো। তবে নিয়মিত মসজিদে আসার আহ্বান জানাতেন। ধারণা করা হচ্ছে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তাকে তুলে নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত বিষয়টি পরিবারটিকে জানানো।

মেহেরপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, আনোয়ারসহ অন্যান্যদের মেহেরপুরের পুলিশ আটক করেনি। অন্য কোনো সংস্থা তাদের আটক করেছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশের যেসব খাতে সহযোগিতা করবে চীন

ইতালিতে নাহিদ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন একজন গ্রেপ্তার

মধ্যরাত থেকে সোমবার পর্যন্ত কয়েক জেলায় বজ্র ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রাথমিকে হাওর, দ্বীপ ও চরাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য সুখবর

পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ লিটনরা

রাইড শেয়ারের নারী যাত্রীকে ধর্ষণ : আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি

পদ হারানোয় আইনি লড়াইয়ে ফারুক আহমেদ, হাইকোর্টে রিট

রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের

কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বৃদ্ধি, অব্যহত থাকবে আরও দুদিন

নদীতে আবর্জনা ফেলার অভিযোগে তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বরখাস্ত

১০

কুড়িগ্রামে নজরুল ও ভাওয়াইয়া চর্চাকেন্দ্রের উদ্বোধন

১১

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস, আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং

১২

কে কখন নির্বাচন চায়, একান্তই দলীয় বিষয় : জনতা পার্টি বাংলাদেশ

১৩

সাভারে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

১৪

‘শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম সংস্কার শুরু করেছিলেন’

১৫

পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ

১৬

পুকুরে গোসল করতে নেমে দুই শিশুর মৃত্যু

১৭

ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজার পরিবারের প্রতি বেলার খাবার চলমান রয়েছে : আমিনুল হক

১৮

অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে : খন্দকার এনাম

১৯

আনচেলত্তি সাম্বার ছন্দ ফেরাবেন!

২০
X