

২০২১ সালে বাংলাদেশের মেডিকেল ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা ঘটে। ২৬ বছর বয়সী একজন বিবাহিত নারী, যিনি মূলত এনজাইটি, টেনশন, ঘুমের সমস্যা ও মাঝে মাঝে বুক ধড়ফর নিয়ে ভুগছিলেন। এ সব সমস্যা নিয়ে তিনি একজন স্বনামধন্য সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যান।
প্রাথমিক চিকিৎসায় মানসিক উপসর্গ কমলেও ওই নারী জানান, শ্বাস নেওয়ার সময় মাঝে মাঝে তার বুকে চাপ–চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। অথচ তার হাপানি, এলার্জি বা ফুসফুসের প্রদাহজনিত কোনো রোগ নেই। তার পরিবারেও এলার্জি বা ফুসফুস প্রদাহজনিত কোনো রোগ নেই।
তবু উপসর্গকে গুরুত্ব দিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট সতর্কতামূলকভাবে চেস্ট এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। এরপরই হাতে আসে চমকে দেওয়ার মতো রিপোর্ট।
টেস্ট রিপোর্টে ওই নারীর ফুসফুসে দেখা যায় অসংখ্য ক্ষুদ্র পাথরের কণা। মেডিকেলের ভাষায়, পালমোনারি এলভিওলার মাইক্রোলিথিয়াসিস (Alveolar Microlithiasis), সংক্ষেপে পিএএম। এটি এমন একটি বিরল রোগ, যেখানে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ের ভেতরে ক্যালসিয়াম ফসফেট জমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরসদৃশ গঠন তৈরি করে।
বিশ্বব্যাপী এ রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত কম। প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র একজন। এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত কেস মাত্র ১৫০০।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে চাঞ্চল্যকর ও ঐতিহাসিক ঘটনার কথা জানিয়েছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনাম। কালবেলাকে তিনি জানান, চার বছর আগে তার চেম্বারেই মিলেছিল এমন একজন বিরল রোগী।
ডা. সাঈদ এনাম জানান, পিএএম একটি জেনেটিক্যাল রোগ। অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গহীন থাকে। যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের ক্যানসারের মতো মারাত্মক জটিলতাও তৈরি করে না। রোগটি নিয়ে গবেষণা এখনও চলমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও প্রাথমিক পরীক্ষা মিলিয়ে এমন বিরল রোগও সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব।
ডা. এনাম বলেন, বিরল ও গবেষণা পর্যায়ে থাকায় এই ধরনের অসুস্থতার নিশ্চিত চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে একেবারে শেষ পর্যায়ে ফুসফুস ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না।
মন্তব্য করুন