রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মান্নান গাছির খেয়াঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তির পোহাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মান্নান গাছির খেয়াঘাট দিয়ে আশপাশের এলাকার প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা নিয়মিত যাতায়াত করেন।
পদ্মা নদীর খালের ওপর সেতুটি চালু হলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
খেয়াঘাটের দুই পাশে একাধিক হাটবাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে নিয়মিত ফরিদপুরে যাতায়াত করতে হয়। ওপারের মানুষও লেখাপড়া-বাজারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে গোয়ালন্দে আসেন।
এ কারণে দীর্ঘদিন দুই অঞ্চলের মানুষ এ অংশে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে যাতায়তের সুবিধার জন্য সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।
তাই খেয়া নৌকায় করে এ অঞ্চলের মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকায় সেতুটি নির্মাণের কাজ পায়। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়।
শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৪ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী আবদুর রব শেখ বলেন, ‘এ পাড়ে ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় আমাদের এলাকার শিক্ষার্থী গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাই স্কুলে লেখাপড়া করে। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
সেতুর যে পাশের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি সেখানে কাঠ-বাঁশ দিয়ে মই তৈরি করা হয়েছে। এ মই বেয়ে সেতু পার হওয়া রত্মা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে আমার সাত-আটবার ওপাড়ে যেতে হয়। নৌকায় প্রতিবার পার হতে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। প্রতিদিন ৩০-৪০ টাকা দিয়ে নৌকায় পার হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই পার হচ্ছি।’
মান্নান গাছির খেয়া ঘাটের নৌকার মাঝি আবদুস সাত্তার খাঁ বলেন, ‘নৌকায় শুধু মানুষ যাতায়াত করে। ভারী কোনো পণ্য নেওয়া সম্ভব না। রাতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে জরুরি রোগী হাসাপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অনেক সময় রোগী খুব সংকটাপন্ন থাকেন।’
উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম মৃধা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ চলছে। সেতু করতে কি এত সময় লাগে? মাঝেমধ্যে দেখি কাজ চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর কাছে বলেছি, তিনি এ ব্যাপারে কয়েকবার উপজেলা প্রকৌশলীকে দ্রুত কাজ শেষ করার কথা বলেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে হাজারো মানুষের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।’
উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণকাজ কিছু দিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়। পরে আবার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আমি প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, ‘মান্নান গাছির সেতুর কাজ খুব ভালোই চলছিল। হঠাৎ বিল সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি, বিলসংক্রান্ত ঝামেলা শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজে কোনো গাফিলতি নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজে কোনো অনিয়ম এবং কাজ না করলে আমরা সে ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। আশা করি, দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
মন্তব্য করুন