সারোয়ার জাহান কলি, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ১১:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

হারিয়ে যাচ্ছে সুস্বাদু মাখনা ফল

পুষ্টিকর সুস্বাদু জলজ ফল মাখনা। ছবি : কালবেলা
পুষ্টিকর সুস্বাদু জলজ ফল মাখনা। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশের খাল-বিল-ঝিলে হাজারো জলজ উদ্ভিদের দেখা মেলে। সঠিক পরিচর্যা আর অবহেলায় এসব এখন বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত। নানা কারণে আজকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাণ-প্রকৃতির উৎস গুরুত্বপূর্ণ অনেক উদ্ভিদ। এর মধ্যে অন্যতম গ্রামীণ মানুষের পুষ্টিকর সুস্বাদু জলজ খাবার মাখনা।

টাঙ্গাইলের বিল ও নিম্নাঞ্চলে একসময় মাখনার প্রাচুর্য ছিল। বর্তমানে ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের কালিয়ান বিলে এর দেখা মেলে। বাহারি রং আর নকশাদার পুষ্টিকর মাখনা ফল এবং এর পাতা সবাইকে মুগ্ধ করে। পাতা, ফুল ও ফলের গোড়ায় থাকে অসংখ্য সুচালো কাঁটা। অসতর্ক হলেই কাঁটা বিঁধে রক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে।

মাখনার অপর নাম ফক্সনাট। ভারত তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এর আদি নিবাস। মিঠাপানির জলাধার, বিল ঝিল এবং হাওরে এর বেড়ে উঠা। মাখনাগাছ দেখতে লাল শাপলার মতোই। তবে পাতা শাপলার চেয়েও বড়।

সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে মাখনা গাছের ফুল ফলে পরিণত হয়। ফল কাঁটাযুক্ত গোটার মতো। ভেতরে থাকে অসংখ্য সাদা দানা। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ঔষধি গুণসম্পন্ন মাখনায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শর্করা, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও লবণ থাকে। এটি ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণ করে। মাখনার কাঁচা বীজ ডায়রিয়ায় উপকারী। এর পাতা বাত রোগের কাজে আসে।

ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরে ছোলার দানার মতো নরম বীজ কাঁচা খাওয়া যায়। শুকিয়ে প্রসেস করে মোয়া, মুড়কি বা ডেপের খইয়ের মতো নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। মাখনার দানা পিষিয়ে বানাত রুটি বানিয়ে খাওয়া যায়।

মাখনার বড় বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুর, বড়কাটরা ও ছোটখাটরা।

সম্প্রতি ঘাটাইলের কালিয়ান বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের চতুর্দিক থেকে প্রভাবশালীরা জবরদখলে নিচ্ছে। যে যার মতো করে বিল থেকে মাটি তুলে কৃষিজমিতে রূপান্তরিত করছেন। প্রভাবশালীরা জমি নামে-বেনামে পত্তন নিয়ে অথবা জবরদখল করে বিল সংকুচিত করে ফেলছে। ফলে সংকুচিত হয়ে আসা বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পুষ্টিকর মাখনা।

পাকা সড়ক থেকে নেমে কৃষিজমি পেড়িয়ে কালিয়ান বিলের মাঝখানে গিয়ে দেখা গেল কয়েক একর জায়গা জুড়ে স্বল্প পানিতে বৈচিত্র্যময় রং ছড়ানো মাখনা পাতা বাতাসে দুলছে। চারদিকে পানকৌড়ি, কালেম, ডাহুক, শামুক খোল ও বক পাখি ওড়াউড়ি করছে। এই প্রতিবেদকের পদচারণায় সেসব পাখি উড়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ।

বিলের পশ্চিম পাড়ের চাম্বলতলা গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ হোসেন আলী (৭৫)। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় মাখনা বিষয়ক অনেক জানা-অজানা কথা পাওয়া গেল। তিনি বলেন, বাল্যকালে কালিয়ান বিল থেকে মাখনা ফল তুলতেন। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ মাখনা সংগ্রহ করে খাদ্যাভাব মেটাত। এটি এখনো গরিবের পুষ্টিকর ফল বলে পরিচিত।

গান্ধী গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, বিল এলাকাবাসীর খাদ্য-খাবার জোগানোর অন্যতম উৎস। একসময় বিলে প্রচুর মাখনা পাওয়া যেত। মাখনার দানা পিষিয়ে বানাত রুটি। দুই-তিনটি মাখনা রুটি খেয়ে সারাদিন পাড়ি দেয়া যেত। এবারে বৃষ্টি কম হওয়ায় তেমন পানি হয়নি। ফলে মাখনা ফলের পরিমাণও কমে গেছে।

কালিয়ান গ্রামের মোকছেদ আলী কালিয়ান বিলের মাখনা তুলে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন গত ৩০ বছর যাবত। তবে এবার খুব বেশি মাখনা তুলতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী বন উজাড় হওয়ায় এবং সেখানে সামাজিক বনায়নের নামে হালচাষ করায় টিলার মাটি ধুয়ে নামছে বিলে। এছাড়া প্রভাবশালীদের জবরদখল তো আছেই। ভরাট বিলের স্বল্প পানিতে মাখনা বিস্তার লাভ করতে পারছে না। এমতাবস্থায় বিল থেকে মাখনাসহ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব রক্ষায় সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুরাদনগরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২ জনের মৃত্যু

প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

কুষ্টিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ ভোমরারা হতাশ হয়েছেন : নুর

দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

এবার চট্টগ্রামে সাংবাদিককে গলা টিপে হত্যাচেষ্টা

সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

এনসিপির হয়ে নির্বাচন করব কিনা সিদ্ধান্ত নেইনি : আসিফ মাহমুদ

সবাইকে টেস্ট খেলানো জরুরি নয় : জোরাজুরিতে দেউলিয়ার শঙ্কা

প্রবাসেও আপ বাংলাদেশের কমিটি ঘোষণা 

১০

ইসরায়েল পুড়ছে রেকর্ড তাপমাত্রায়

১১

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার চেক দিল যমুনা অয়েল

১২

অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা-অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

১৩

৩০০ আসনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে গণতন্ত্র মঞ্চ 

১৪

ড্রোন শো পরিচালনার প্রশিক্ষণে চীন যাচ্ছেন ১১ জন

১৫

সামাজিক কাজে অবদান রাখায় নিবন্ধন পেল প্রভাত

১৬

স্বাস্থ্যের ডিজির আশ্বাসে মন গলেনি, নতুন কর্মসূচি ছাত্র-জনতার

১৭

শহীদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে বস্তিবাসীদের অবস্থান

১৮

পিআর পদ্ধতিতেই নির্বাচন হতে হবে : চরমোনাইর পীর

১৯

চট্টগ্রামে ১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা মেয়রের

২০
X