ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী স্লুইসগেট সংলগ্ন বাঁধ হঠাৎ ভেঙে পড়ায় কয়েক হাজার মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন। বাঁধ ভাঙার কারণে পানিবন্দি হয়ে আছে উপজেলার স্লুইসগেট, চাঁদপুর ইউনিয়নের দড়িচাঁদপুর, কেয়ামূল্যাহ, কাঞ্চনপুর, গুরিন্দা, চাঁচড়া ও কাটাখালীসহ দুর্গম চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই স্লুইসগেটের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় এবং নির্মাণে গাফিলতির কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধ ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড স্রোতের পানি গ্রামে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি এবং রাস্তাঘাট ডুবে যায়। নদীর প্রবল স্রোতে স্লুইসগেটের মুখে থাকা ছয়টি ঘর ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে। আতঙ্কে অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।
এদিকে দুর্গম চরাঞ্চল চর মুজাম্মেলসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তীব্র বাতাসে চরাঞ্চলের মানুষের আতঙ্কে দিন কাটছে।
ক্ষুব্ধ হয়ে একজন বাসিন্দা বলেন, বহুবার ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলছি, কাজটা ঠিকমতো করেন। কেউ শোনে নাই। আর এখন আমাগো সর্বনাশ হইলো।
আরেকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, স্লুইসগেটের নির্মাণে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত মাটি স্থানীয় কিছু নেতা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বাধা দিতে গেলে হুমকি দিয়েছে। সেই মাটি বাঁধে ব্যবহার হলে আজ এই দুর্যোগ হতো না।
ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভ দেবনাথ। তিনি জানান, বাঁধ ভেঙে বহু মানুষ বিপাকে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ৫০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ দৌলা জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় আমি গিয়েছি। ঝুঁকিমুক্ত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে জিওরোল, ব্লক ও মাটি নিয়ে অনেক লোকজন কাজ করে যাচ্ছে; যতক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত বেড়িবাঁধ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ চলমান থাকবে।
মন্তব্য করুন