রহিমা খাতুন দুই চোখে দেখতে পারেন না। শরীরে হাজারও ক্ষতচিহ্নের দাগ। সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে যাযাবর জীবন কাটছে তার। যেখানেই রাত হয়, সেখানেই থেকে যান রহিমা। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে চলে মা-ছেলের সংসার।
৮ বছরের শিশু সন্তান আবদুর রহমান একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলেকে হারানোর ভয়ে সব সময় ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন রহিমা খাতুন। রাতে ঘুমানোর সময়ও নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখতে দেখা গিয়েছে তাকে। মা-ছেলের এই শিকলবন্দি জীবন দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
রহিমা খাতুনের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের জয়নাল হোসেনের মেয়ে।
দীর্ঘদিন ধরে রহিমা খাতুনের কোনো খোঁজখবর নেন না তার স্বামী। প্রতিবন্ধী এ শিশু সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তিনি।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসা নিতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন তারা। রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন হাসপাতালের মেঝেতে। ঘুমানো অবস্থায় ছেলেকে শিকল দিয়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন। না খেয়েই হাসপাতালে ঘুমিয়ে ছিলেন মা-ছেলে। গতকাল দুপুরে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান রহিমা খাতুন।
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন ইদ্রিস আলী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মা ও ছেলে হাসপাতালে আসে। ওষুধ নেওয়ার জন্য এসেছিলেন তারা। পরে তাদেরও ওষুধ দেওয়া হয়।
গতকাল দুপুরে নিজের জীবনের অসহনীয় কষ্টের কথা জানিয়ে রহিমা খাতুন এ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী কোনো খোঁজখবর নেন না। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তিনি ভিক্ষা করেন। তার ঘর বাড়ি নেই, রাস্তায় থাকেন। দুই চোখে দেখতে পাই না। বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত আমি। ছেলের সহায়তায় চলাফেরা করেন তিনি। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না।
তিনি জানান, ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়। দেখাশোনা করার মতো কোনো মানুষ নেই। সরকারের কাছে একটি ঘরের দাবি করছি।
ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, তিনি ওই মহিলাকে চিনতে পারেননি। ওই মহিলার বাড়ি আমার ইউনিয়নে না।
মন্তব্য করুন