বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করে বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে ভোট হবে না, চুরি হবে। আমরা কোনো ভোট চুরি বরদাস্ত করব না।
তিনি বলেন, পরিষ্কার কথা, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় দেওয়া সব সাজা বাতিল করতে হবে, ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এটা আমাদের জীবন-মরণের প্রশ্ন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অস্ত্বিত্বের প্রশ্ন।
শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেওয়া সাজা বহালের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নির্যাতন থেকে কেউ বাদ যায় না। আলেম ওলামারা বাদ যায় না, শিক্ষক বাদ যায় না। সবাইকে নির্যাতন করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকতে চায় এরা। আজ অনেকের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, পা পঙ্গু হয়ে গেছে। এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অত্যাচার করে নির্যাতন করে, গুম করে, গুলি করে, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। নির্বাচন দিতে ভয় পায়, আমরা বলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন, তারা দিতে চায় না।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে থাকতে হবে, রোদে থাকতে হবে, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে আমি লড়াই করছি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংগ্রাম করছেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। তরুণদের কাজ আছে, যুবকদের কাজ আছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, যদি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, আর যদি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ। এরা যে অন্যায় অত্যাচার করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের ২৭ জন নেতাকে খুন করা হয়েছে। বারবার জেলে যাচ্ছেন নেতারা। কত বড় বীর পুরুষ। পুলিশকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার করছে। পুলিশ তো চায় না, তাকে বাধ্য করা হয়।
তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশে আজকে সমাবেশ করতে সহায়তা করেছেন, আগামীতেও সেই সহযোগিতা করবেন। এ দেশ আওয়ামী লীগের নয়, হাসিনার নয়, এখানকার এমপিদের নয়। দেশটা সাধারণ মানুষের। যারা রোদে পুড়ে ফসল ফলায়, যারা শ্রমিকের কাজ করে, যারা যমুনা নদী মোকাবিলা করে টিকে থাকে এ দেশ তাদের। আমরা প্রত্যেকেই ট্যাক্স দেই, আর ট্যাক্সের টাকা চুরি করে কানাডার বেগমপাড়ায় পাঠিয়ে দেন। বিদ্যুতের দাম বাড়ান, অথচ বিদ্যুৎ নাই। অনেক উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়ন কি উড়াল সেতু। উড়ায়ে দেয়, হাঁটতেই পারি না, উড়ে যাব। আমাদের রাস্তা ঠিক নাই, আমাদের নদী পারাপারের ব্যবস্থা নেই। এই সিরাজগঞ্জ শহরকে পচায়ে দিয়েছে। কত সুন্দর শহর ছিল। উন্নয়নের কথা বলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশ থেকে ঋণ করে নিয়ে আসে আর আমাদের পকেট কেটে নেয়। এই সরকার পকেটমার সরকার।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, রিকশাওয়ালারাও ঝগড়া করার সময় একজন আরেকজনকে বকা দেয় তুমি তো বড় খারাপ লোক, তুমি তো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচনে ভোট দিতে দেন নাই। ’১৪ সালের নির্বাচনে ভোট ছাড়াই ১৫৪ জন নির্বাচিত হয়। আর ’১৮ সালের নির্বাচন দিনের ভোট রাতে হয়। আজ আমেরিকা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে আর গায়ে খুব লাগছে। তুমি ভোট চুরি করবা তাতে কিছু যায়-আসে না, দিনের ভোট রাতে করলে যায়-আসে না। এ নিয়ে কথা বললে গায়ে লাগে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
মন্তব্য করুন