এক পরিবারে অনেক মেধাবি সন্তান থাকতে পারে। তবে পরিবারের সব মেধাবি সন্তান একসঙ্গে দেশের নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে এমন নজির তেমন একটা শোনা যায় না। কিন্তু লক্ষ্মীপুর জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্কুল শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর ৬ ছেলেমেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ার সুযোগ পেয়ে ব্যতিক্রম একটি নজির স্থাপন করেছে। এমন ব্যতিক্রম ঘটনায় খুশি এলাকাবাসীও।
স্কুল শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার করইতোলা বাজার সংলগ্ন চর লরেঞ্চ গ্রামের মুসলিমপাড়া এলাকায়। ছায়েদ উল্লাহ ও তার স্ত্রী শামীমা বেগম সন্তানদের পড়াশোনার পিছনে নিজের সব সম্পত্তি ব্যয় করেও এখন খুশি। এমন মেধাবি সন্তানদের নিয়ে গ্রামবাসীরাও খুশি। ছায়েদ উল্লাহ নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরের দক্ষিণ ওয়াপদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন শিক্ষকতার পর এখন অবসর নিয়েছেন।
শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ কালবেলাকে জানান, তার সবশেষ এবং ছোট ছেলে আরাফাত হোসেন চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এ ইউনিউটে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া একমাত্র মেয়ে পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগে। এ নিয়ে একে একে শিক্ষক বাবার ছয় সন্তানের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন।
নিজের মেধাবী সন্তানদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ছায়েদ উল্লাহ আর জানান, শিক্ষকতার সৎ উপার্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করতে পেরে তিনি খুশি। তিনি জানান, শুরুটা ২০০৭ সালে। তার বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ২০০৭-০৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পরে সে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। বর্তমানে তিনি সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তার ২য় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন ২০১০-১১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে মামুন। বর্তমানে শাজাহান সিরাজ আল মামুন কর্মসংস্থান ব্যাংকের চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
৩য় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। আশরাফুল ইসলাম শহীদ বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
চতুর্থ ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছেন। তিনি এখন বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ বলেন, আমার জীবনে প্রতিটি টাকা সৎ পথে উপার্জন করেছি এবং সৎপথে খরচ করেছি। আমার পাঁচ ছেলে এবং এক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার গৌরব অর্জন করায় আমি সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি দীর্ঘ ৩০ বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি, আমি আমার ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষিত করার জন্য সর্বদাই সচেষ্ট ছিলাম। আমার ছেলে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার গৌরব অর্জন করেছে, আমি আপনাদের সবার কাছে আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য দোয়া চাই।
এদিকে একই পরিবারের ছয় ভাইবোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার খবরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এলাকার সাধারণ ও শিক্ষিত সমাজ এই সফলতার জন্য শিক্ষক পরিবারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন