১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর থেকেই দেশজুড়ে অসন্তোষ ও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে সোমবার (৩০ জুন) বেলা ১১টায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের সামনে আগের ফল বাতিল ও নতুন ফল প্রকাশের দাবিতে ফের বিক্ষোভ করেন শত শত চাকরিপ্রার্থী।
এ সময় অবস্থান কর্মসূচি থেকে ‘দাবি মোদের একটাই, সনদ চাই সনদ চাই’, ‘সনদ চাই, দিতে হবে’, ‘এক দফা এক দাবি, সনদ চাই, সনদ চাই’ স্লোগান দেওয়া হয়।
ফলাফলে অসংগতি ও বৈষম্যের অভিযোগ
গত ৪ জুন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়, যেখানে ৬০ হাজার ৫২১ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ২৩ জুন সংশোধিত ফলে আরও ১১৩ জনকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। এনটিআরসিএ জানায়, ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফল কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথমে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং ফল পুনঃপরীক্ষা ও যাচাইয়ের পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে আন্দোলনকারী প্রার্থীরা এই ফলে ব্যাপক অসংগতি ও বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, মৌখিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার পরও অনেকে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। বিশেষ করে বোর্ডভিত্তিক ফলে ব্যাপক তারতম্যের অভিযোগ উঠেছে। কিছু বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ১ থেকে ৩ জন পাস করলেও, অন্য কিছু বোর্ডে ২৯ জনও পাস করেছেন। এ বিষয়টি ফলের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ ও অভিযোগ
ভুক্তভোগী প্রার্থীরা পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনেছেন। ফাতিমা বেগম নামে একজন প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাইভায় সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে। এটা ন্যায়সংগত নয়।’ একই ধরনের অভিযোগ করেছেন চাঁদপুরের প্রিয়াঙ্কা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাহমুদা বেগম। তারা সবাই ফল পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে আন্দোলনরত প্রার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কার্যালয়ে বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে এনটিআরসিএর প্রধান উপদেষ্টার সহকারী সচিব তাদের দাবি শোনেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয়ের আশ্বাস দেন। তবে আন্দোলনকারীরা এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন এবং ফলাফল পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। লিখিত পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন এবং মৌখিক পরীক্ষায় ৮১ হাজার ২০৯ জন অংশ নেন। চূড়ান্তভাবে মোট ৬০ হাজার ৬৩৪ জনকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে এবং এই শূন্যপদগুলো পূরণে সফল প্রার্থীদের নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
মন্তব্য করুন