সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং নেতৃত্বের বিরোধকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের ওপর বারবার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। ২০১৯ সাল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত একাধিক হামলায় ক্লাবের সভাপতি, সম্পাদকসহ বহু সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ হামলাগুলোতে ভাড়াটে সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত এবং বহিরাগতদের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, যা জেলার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিয়েছে।
হামলা রক্তাক্ত প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে বর্তমান সভাপতি আবুল কাশেমের অনুসারীদের ওপর এক অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলা বিরোধের জেরে এ হামলায় সভাপতি আবুল কাশেম, সাংবাদিক আমিনুর রহমান, বেলাল হোসেন, সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।
হামলার শিকার সভাপতি আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, ক্লাবের অপর অংশের নেতা আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান এবং অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্ত এই পরিকল্পিত হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে একটি সভার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেই মুহূর্তে আমাদের ওপর হামলা করা হয়।’
আবুল কাশেম আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেস ক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই নির্যাতন চালানো হয়।
পূর্বের হামলার পুনরাবৃত্তি
এটি সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে প্রথম হামলার ঘটনা নয়। এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ মে তারিখেও ক্লাবের ভেতরে ঢুকে সভাপতি আবু আহমেদ ও সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। সেদিনও রড ও ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে হামলাকারীরা ক্লাবের সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালায়। সে সময়ের ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছিলেন, ক্লাবের বাইরে বহু দাগী সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও চোরাচালানী মহড়া দিচ্ছিল এবং পুলিশকে খবর দিয়েও তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালের সেই হামলার নেপথ্যেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আবু সাঈদ এবং সাম্প্রতিক হামলাতেও তিনিই মূল পরিকল্পনাকারী।
হামলার মিল ও অভিযুক্তদের পরিচয়
দুটি হামলার ক্ষেত্রেই কিছু বিষয় লক্ষণীয়। উভয় ঘটনাতেই হামলাকারী হিসেবে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসী’ এবং ‘মাদকাসক্তদের’ জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দুটি হামলারই মূল কারণ হিসেবে প্রেস ক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা ও নেতৃত্ব দখলের বিরোধকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
সাম্প্রতিক ও পূর্বের উভয় হামলার মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত আবু সাঈদের বিরুদ্ধেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা ও অন্যতম বড় ডোনার। তাদের আরও অভিযোগ, এই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেন। ২০১৯ সালের হামলায় পুলিশকে জানিয়েও তাৎক্ষণিক সহায়তা না পাওয়ার পেছনে তার প্রভাব কাজ করেছিল বলে সেসময় অভিযোগ উঠেছিল।
সাম্প্রতিক হামলায় অভিযুক্ত অন্য দুই নেতা আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পার বিষয়েও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। একাধিক সাংবাদিক জানান, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া আল ইমরান একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত। অপর অভিযুক্ত অমিত ঘোষ বাপ্পাও মাদকাসক্ত এবং তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোল এলাকার একটি দোকান থেকে ট্রাফিকের মামলার জরিমানা বাবদ ৩,০০০ টাকা নিয়েও তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেননি বলে অভিযোগ আছে।
ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও দাবি
বারবার এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রতিটি ঘটনার পরই প্রেস ক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। তবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার স্থায়ী কোনো সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছেই।
মন্তব্য করুন